Saturday, November 7, 2015

কখনো একইভাবে দুবার হারবে না: চাক নরিস

চাক নরিস (জন্ম: মার্চ ১০, ১৯৪০) বিখ্যাত আমেরিকান মার্শাল আর্টিস্ট ও অভিনেতা। ২০০৮ সালে লিবার্টি ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে চাক নরিস যে বক্তৃতা দেন, এটি তার সংক্ষেপিত ভাষান্তর।
চাক নরিসতোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আজকের সুন্দর সকালে আমাকে তোমাদের সামনে কিছু বলতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। 
আমি স্বীকার করি, এই কাজটা আমি একদমই করতে পারি না। এটাই আমার প্রথম সমাবর্তন বক্তৃতা।
জীবনে সৃষ্টিকর্তা সব সময়ই আমাকে সাহায্য করে গেছেন, পথ দেখিয়েছেন। আমার জন্ম ওকলোহামাতে। বলতে বাধা নেই, আমার পরিবারে অনেক অভাব ছিল; কিন্তু আমার মা ছিলেন অসাধারণ একজন নারী। আর আমার বাবা ছিলেন একজন মদ্যপ, তিনি বলতে গেলে আমার জীবনে কোনো ভূমিকাই রাখেননি। 
ছোটবেলায় আমি অনেক লাজুক ও আত্মমুখী ছিলাম; খেলাধুলাও তেমন করতাম না। আমি কখনো স্কুলে আমার ক্লাসে সবার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে পারিনি। যখনই শিক্ষক আমাকে কিছু বলার জন্য ডাকতেন, আমি আমার নিজের সিটে বসে মাথা ঝাঁকাতাম। কারণ, আমি ভয় পেতাম, আমি কথা বললে সবাই হাসবে। যদিও আমার বসে থাকা দেখে অনেকে হাসত এবং এতে লজ্জায় আমার চেহারা লাল হয়ে যেত।
হাই স্কুল পাস করে আমি বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়ে কোরিয়া চলে গেলাম এবং সেখানেই মার্শাল আর্ট বিষয়টার সঙ্গে আমার পরিচয় হলো। ১৯৬১ সালে যখন আমি সেখান থেকে ফিরে আসি, আমার সঙ্গে ছিল তায়েকোয়ান্ডোর ব্ল্যাক বেল্ট ও জুডোর ব্রাউন বেল্ট। তখন আমেরিকার খুব বেশি লোক মার্শাল আর্ট সম্পর্কে জানত না। আমি একটি মার্শাল আর্ট ক্লাব খুললাম এবং সবাইকে আমন্ত্রণ জানালাম। আমি ভাবলাম, আমাকে নিশ্চয় আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের সামনে কিছু বলতে হবে। আমি আধা পৃষ্ঠার একটি বক্তৃতা তৈরি করলাম এবং সাত দিন সেটা মুখস্থ করলাম। সেটা আমি এত ভালো মুখস্থ করেছিলাম যে উলটো দিক থেকেও তা বলতে পারতাম।
আমি ৫০০ জন আমন্ত্রিত অতিথির মাঝখানে হেঁটে গেলাম, আর বললাম, ‘শুভসন্ধ্যা। আমার নাম চাক নরিস এবং আমি আপনাদের এখানে অভিবাদন জানাচ্ছি’—এটাই ছিল শেষ বাক্য, যেটা আমার মনে আছে। এরপরের যে স্মৃতি আমার মনে আছে, সেটা হলো অতিথিদের মাঝখান থেকে চলে আসার এবং কিছু কায়দা দেখানোর স্মৃতি। আমি এখনো জানি না, সেদিন আমি অতিথিদের সামনে কী বলেছিলাম। আমি যে কাজটা করেছিলাম, সেটা ছিল ২১ বছর ধরে যে অবিশ্বাস নিজের মধ্যে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলাম, সেটাকে ভেঙে ফেলা।
আমি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর লস অ্যাঞ্জেলসে প্রথম মার্শাল আর্ট স্কুল খুললাম। মার্শাল আর্টের মূল যে শিক্ষাটি আমি পেয়েছি সেটা হলো, একজন তখনই হারে, যখন সে পরাজয়ের অভিজ্ঞতাটি থেকে কোনো শিক্ষা পায় না। তাই আমি আমার ছাত্রদের শেখাই, তোমরা হারতে পারো, কিন্তু কখনো একইভাবে দুবার হারবে না।
আমার স্কুল ভালোই চলছিল, এ সময় একটি কোম্পানি এসে আমার স্কুলের স্বত্ব কিনে নিতে চাইল। তখন আমার তিনটি স্কুল ছিল। কোম্পানিটি আমাকে জানায়, তারা সারা দেশে ‘চাক নরিস মার্শাল আর্ট স্কুল’ খুলতে চায়। আমি ভাবলাম, ভালোই তো। আমি আমার স্কুলকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেব। এর দুই বছর পরে সেই কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যায় এবং আমি আমার সব কটি স্কুল হারাই।
আমি কিন্তু থেমে যাইনি। নতুন করে কিকস্টার্ট নামে একটি ফাউন্ডেশন চালু করলাম। ১৫ বছর ধরে আমি হাজারো তরুণের মধ্যে মার্শাল আর্টের দর্শনকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছি। আমেরিকার লাখো মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের বাণিজ্যিক মার্শাল আর্ট স্কুলে পাঠাতে পারেন না। আমি ভেবেছি, কীভাবে তাঁদের সাহায্য করতে পারি। আমি ঠিক করলাম, প্রতি শহরের মিডল স্কুলগুলোতে বিনা মূল্যে আমি মার্শাল আর্ট শেখাব, যার ব্যয়ভার নেবে আমার ফাউন্ডেশন। 
এটা ছিল ১০ বছর আগের কথা। এর মধ্যে আমাদের স্কুল থেকে এক লাখ ৫০ হাজার তরুণ মার্শাল আর্ট শিক্ষা নিয়েছে। কিন্তু একজন ছেলের কথা আমি বিশেষ করে বলতে চাই, যে ছিল আমাদের জন্য সাফল্যের একটি বড় প্রেরণা। আমরা স্কুলে মূলত ষষ্ঠ,সপ্তম, অষ্টম মানের শিশুদের শিক্ষা দিই। কারণ, এ সময়েই শিশুরা সবচেয়ে দ্রুত শেখে। আমাদের লক্ষ্য থাকে, যাতে তারা এ সময়ে সঠিক পথ থেকে সরে না যায় এবং জীবনের লক্ষ্য ঠিক রাখে। কিন্তু আমাদের সেই ছেলেটি এই সময়ে একটি সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ছেলেটি ষষ্ঠ মানে পায় ‘ডি’ গ্রেড এবং তখন বাইরের দলের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। কিন্তু মার্শাল আর্ট শুরু করার পরে তার চরিত্র পাল্টে যেতে থাকে এবং বাস্তবিকই সে ভালোর পথে আসে। সে তার অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে এবং তার পড়ালেখাতেও উন্নতি করতে থাকে। সপ্তম মানে তার গ্রেড আসে ‘সি’ এবং অষ্টম মানে এসে সে পায় ‘বি’ গ্রেড। মার্শাল আর্ট তার মনজগৎকে বদলে দেয় এবং ছেলেটি নবম থেকে ১২শ মান পর্যন্ত টানা ‘এ’ গ্রেড পেয়ে এমআইটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। 
মার্শাল আর্ট আমার জীবনকে পরিবর্তন করেছে। আমি মনে করি, এটা আরও অনেক তরুণের জীবন গড়ে দিতে সক্ষম। সৃষ্টিকর্তা আমাকে সব সময় সঠিক পথ দেখিয়েছেন। তোমরা তাঁর ওপর বিশ্বাস আনো আর পরিশ্রম করে যাও, জীবনের সবকিছু ভালোভাবেই এগোবে। 
তোমাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। 
সূত্র: ওয়েবসাইট, ইংরেজি থেকে ভাষান্তর: মনীষ দাশ

No comments: