Saturday, November 7, 2015

আজ যা কল্পনা তা আগামীর বাস্তবতা : সুন্দর পিচাই

সুন্দর পিচাইসুন্দর পিচাই গুগল–এর নতুন সিইও। জন্ম ১৯৭২ সালের ১২ জুলাই ভারতের চেন্নাইতে। আইআইটি থেকে পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। তিনি অ্যানড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, ক্রোম ব্রাউজারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আমি সব সময় উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ভক্ত। সাধারণ মানুষের জন্য উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করার আনন্দ অন্য রকম হয়। গুগল ইনকরপোরেটেডের মাধ্যমে আমরা এ কাজটি সারা বিশ্বে করে যাচ্ছি। গুগলের মূল আদর্শই হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছানো।
আমার জন্ম চেন্নাইতে। আমি আইআইটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে আসি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার অন্যতম আগ্রহ ছিল কম্পিউটার। গুগলে কাজের সুযোগ পেয়ে আমি সেই আগ্রহের জায়গায় কাজ করার অনেক সুযোগ পেয়েছি। আমি ছোটবেলায় সংখ্যা মনে রাখতে পারতাম অনেক। অনেক ফোন নম্বর মুখস্থ করতে পারতাম। আমার চাচা মাঝেমধ্যেই আমাকে ফোন দিয়ে হারানো অনেক নম্বর জিজ্ঞেস করতেন। ২০০৪ সালে আমি গুগল অফিস গুগলপ্লেক্সে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে যাই। সেদিন গুগল জিমেইল চালু করে। এপ্রিলের প্রথম দিন দেখে আমি ভেবেছিল জিমেইল আসলে গুগলের কোনো রসিকতা হবে।
তরুণদের ওপর আমার ভরসা অনেক বেশি। আমি নিজেও তরুণ বয়সে অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখতাম। এখনকার তরুণদের সাহস দেখে আমি শক্তি পাই। আমার মনে হয় আগামীর ই-কমার্স দুনিয়ার পুরোটার নেতৃত্ব দেবে তরুণেরা।
প্রযুক্তির ভালো-মন্দ দুই দিকই আছে। টেলিভিশন থেকে শুরু করে মুঠোফোন—সবারই মন্দ দিক আছে। মন্দ দিক এড়িয়ে প্রযুক্তিকে উন্নয়নের জন্য কাজে লাগানোই হবে কাজের কাজ। এখন আমাদের হাতের মুঠোয় দুনিয়া চলে আসছে। স্মার্টফোন আসলে একেকটি কম্পিউটারের কাজ করে, যা আমাদের পকেটে ঘুরছে সব সময়। প্রযুক্তি দিয়ে দুনিয়া বদলে দেওয়া সম্ভব এখন। মুঠোফোন আসার আগে আমি একসঙ্গে অনেক কাজ করতে পারতাম না। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন মিটিং আর ই-মেইল একসঙ্গে করতে পারছি আমরা। দুনিয়া সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
মানুষের বুদ্ধিমত্তা বাড়ছে। সেই হিসেবে প্রযুক্তির দক্ষতা আর সক্ষমতাও এগিয়ে চলছে। মানুষের বুদ্ধি আর প্রযুক্তির দক্ষতা যেন এখন একটা বড় আনন্দময় ভ্রমণ। আগামীকাল কী প্রযুক্তি আসবে, তা মানুষ বুদ্ধি দিয়ে আগেই জেনে নিচ্ছে। আজ যা কল্পনা তা আগামীর বাস্তবতা।
গুগলে আমি একটাই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষকে আরও বেশি প্রযুক্তি সংযোগ আর কানেক্টিভিটিতে আনা যায় তা নিয়ে ভাবি আমি। মুঠোফোন দিয়ে মানুষকে ইন্টারনেটে বেশি মাত্রায় সংযোগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির মাধ্যমে বদল আনতে সব সময় আমরা ভাবি। চালকবিহীন গাড়ি থেকে শুরু করে গুগল গ্লাস, এ সবের মাধ্যমে প্রতিদিনকার জীবনে প্রযুক্তির ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।
আমাদের সামনে সমস্যা কী আমরা জানি, সমস্যা কীভাবে সমাধান করতে হয় সেটাও আমরা বুঝি। সাধারণ মানুষের নানা সমস্যার সমাধান করা বেশ কষ্টকর হলেও প্রযুক্তিবিদেরা সমস্যার সমাধান নিয়েই সময় কাটান। ভারতসহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় এখনো ইন্টারনেট সবার জন্য সহজলভ্য হয়নি। এই বিশাল সংখ্যার মানুষকে কানেক্টিভিটির আওতায় আনলে সারা পৃথিবীরই সার্বিক উন্নয়ন হবে।
এই পৃথিবীতে চার শ কোটির বেশি মানুষ এখনো ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে আছে। আমরা এ অবস্থা বদলাতে চাই। আমরা সবাইকে ইন্টারনেটের ছাতার নিচে আনার জন্য ‘লুন’ নামের বিশাল একটি কর্মসূচি নিয়েছি। প্রায় দুই বছর আগে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছি। তখন এই বেলুন তিন দিনের জন্য আকাশে উড়তে পারত, প্রযুক্তির দারুণ কৌশলে এই বেলুন এখন টানা ছয় মাস আকাশে ভেসে থ্রিজি সেবা দিতে পারছে।
তরুণ প্রকৌশলীদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে সব সময় বেশি চিন্তা না করা। আমি নিজে প্রকৌশলী হিসেবে সবাইকে যার যা করতে ভালো লাগে, তাই করার উৎসাহ দিই। আগ্রহের জায়গায় কাজ করলে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। বড় মানুষের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে তা কাজে লাগানো উচিত। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। তোমার যদি কোনো কিছুর মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়, তা নিয়েই কাজ করা উচিত। আমি সারা জীবনই এই আদর্শে কাজ করে যাচ্ছি।

সূত্র: ইন্টারনেট। দ্য ভার্জ, এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে ভাষান্তর করেছেন জাহিদ হোসাইন খান

No comments: