Friday, December 17, 2010

এস, সমবেত হই আমরা

এমন দু:সময় আমরা অতিবাহিত করছি যে, কোন ব্যাপারেই আমরা একমত হতে পারি না। একমত হওয়াতো দূরের কথা নিজেরাই বুঝতে পারিনা কোন মতটা আমাদের প্রকাশ করা উচিত। সকাল বেলাতে যে মতের স্বীকারোক্তির জন্য আমরা হই পাগল, বিকাল বেলাতেই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য হয় সেই মতেরই প্রতিপক্ষ। আমরা আজ প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে আছি, নিজেরা কত ভালো এটাই প্রমান করবার জন্য। সাধারণত দু'ভাবে আমরা নিজেকে ভালো প্রমান করতে পারি; এক। নিজে ভালো কিছু করে আর দুই হল প্রতিযোগীকে আরো নীচে নামিয়ে। নিজেকে জয়ী করবার জন্য আমাদের পছন্দ দ্বিতীয়টি। সত্যিই পরিতাপের বিষয় আমাদের মায়ের জন্য। সেতো স্বপ্নেও এরকমটি একবারের জন্যও ভাবেনি, কেউই নিজের জন্য খারাপটি ভেবে রাখে না। ভাগের মা গঙ্গা পায় না, আমাদের মায়েরও সে রকমেরই বিষয়।ত্রিশ লক্ষ সন্তানহারা মা আজ নির্বিকার তার বেঁচে থাকা সন্তানদের কার্যকলাপ দেখে। তার সন্তানেরা আজ দ্বিধাবিভক্ত। এই মায়ের সোনায়সোহাগা সংসার দেখে কে না হিংসা করেছে; আর আজ কিনা সবাই করতে চায় তাকে অবজ্ঞা অবহেলা। সেই যে শুরু দ্বিজাতি তত্ত্ব দিয়ে, তার পর শুধুই ভাগ আর ভাগ; কত ছোট ভাগ করা যায় সেটারই পাল্লা। মায়ের সন্তানেরা আজ এতটাই বিভাজিত কোন কিছুতেই আজ আর ঐক্যমত নামক শব্দের কোন ছায়া নেই। রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা, ভারত-পাকিস্তান, আওয়ামীলীগ-বিএনপি, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, নারী স্বাধীনতা-পুরুষ প্রাধান্যতা,ধর্মহীনতা-ধর্মনিরেপেক্ষতা এরকমেই হাজারো ইস্যুতে সন্তানেরা আজ বিভক্ত। তারা নিজেরা সামান্য কিছু করার থেকে অন্যর সামান্য প্রচেষ্টার মধ্যে অসামান্য ত্রুটি খুঁজতে সময় ব্যায় করেন। টেলিভিশনের পর্দা জুড়ে আজ টকশো মায়ের সন্তানদের বিনোদন টুকুও কেড়ে নিছে বিভাজনের কড়াল গ্রাসের মাঝখানে।
মায়ের ত্রিশ লক্ষ সন্তানের আত্মা কতটা শান্তিতে আছেন, মা শুধুই এটাই হয়ত ভাবে। আর প্রতীক্ষা করে আরো একটি রেঁনেসার। মা কখন অশা ছাড়ে না; মা জানে সাত কোটি সন্তানের মধ্যে যদি ত্রিশ লক্ষ সন্তানের আত্মা মায়ের পায়ে সমর্পন করতে পারে; ষোল কোটির মধ্যে নিশ্চয় কম হবে না, বেশীয় হবে। মা শুধু জানে না, তার সন্তানেরা এখন আধুনিক হয়েছে!দু:খিনী মায়ের জন্য কিছু করার থেকে বরং যারা করেছে সেই করাটার মান যাচাই বাছাই করতে তাদের বেশী ভালো লাগে। তাদের এই বিশ্বাসটি নেই যে তাদের নিজেরও কিছু করার আছে।
৭১ এর সেই দু:সময়ে, পাক বাহিনী সবাইকে হত্যা করলেও তাদের প্রধান পছন্দ ছিল এদেশের যুব সম্প্রদায়। কারণ তারা যে কোন কিছু ঘটাতে পারে এটাই ছিল তাদের আতংক। সেটা মিথ্যা প্রমানিত হয়নি। তারাই ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা আনেনি কোন বিশেষ ব্যাক্তি বা সম্প্রদায়। আর এটা কারোর পৈতৃক সম্পত্তিও হতে পারে না। আজ আমাদের মাকে তার এই মূমুর্ষ অবস্থা থেকে সুস্থ করতে হলে এগিয়ে আসতে হবে তাদের কেই। ঐক্যমত হতে হবে মাকে বাঁচানোর জন্য। দেশপ্রেম আর মানবধর্মই পারে আমাদের জাতীয়তাটাকে সমুন্নত রাখতে। আমাদেরকেই আনয়ণ করতে হবে আমাদের রেঁনেসাকে। তরুন,আর কতদিন আমরা মাকে কষ্ট দেব?