Showing posts with label Speech. Show all posts
Showing posts with label Speech. Show all posts

Sunday, June 30, 2024

রজার ফেদেরারের যে কথাগুলো আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে: ‘অনায়াসে’ বলে কিছু নেই ও শুধুই একটা পয়েন্ট

এখানে দাঁড়িয়ে আমি কতটা রোমাঞ্চিত, তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। আক্ষরিক অর্থেই জীবনে দ্বিতীয়বার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এসেছি। অথচ বাড়ি ফিরব একটা ডক্টরেট ডিগ্রি (সমাবর্তনেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে দিয়েছে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব হিউমেন লেটারস’) নিয়ে, ভাবা যায়!


‘ড. রজার’। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত বিজয়!

এই পোশাকে আমি একেবারেই অভ্যস্ত নই। ডার্টমাউথে তোমরা প্রতিদিনই এসব পরে আসো নাকি! ভালো কথা, মনে করিয়ে দিই, জীবনের ৩৫টা বছর প্রায় পুরোটা সময়ই আমি শর্টস পরে কাটিয়েছি।

১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে পুরোদস্তুর টেনিস খেলা শুরু করি। কলেজে আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে হ্যাঁ, সম্প্রতি গ্র্যাজুয়েট হয়েছি। আমি গ্র্যাজুয়েট হয়েছি টেনিসে। জানি, শব্দটা আদতে ‘অবসর’। ‘রজার ফেদেরার টেনিস থেকে অবসর নিয়েছেন।’ অবসর...জঘন্য একটা শব্দ। আজ তোমাদের তো কেউ বলছে না, তোমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘অবসর’ নিচ্ছ!

স্নাতকেরা, তোমাদের ব্যথা আমি ‍বুঝি। লোকে যখন বলে, ‘তা সামনের জীবন নিয়ে তোমার পরিকল্পনা কী, শুনি?’ তখন কেমন লাগে জানি। এই প্রশ্ন আমিও শুনি। ‘তুমি তো এখন আর পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় নও। আজকাল করো কী?’

উত্তর হলো, আমি জানি না এবং এই না জানায় কোনো দোষ নেই।

কীভাবে সময় কাটাই? প্রথমত, আমি একজন বাবা। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাই? অনলাইনে অচেনা লোকদের সঙ্গে দাবা খেলি? ঘর পরিষ্কার করিনা। সত্য হলো, আমি আমার টেনিস গ্র্যাজুয়েট–জীবনটা উপভোগ করছি। আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি ২০২২ সালে। তোমরা ২০২৪। অতএব জীবনের রূপান্তরের এই সময়টা নিয়ে কিছু পরামর্শ তো দিতেই পারি।

‘অনায়াসে’ বলে কিছু নেই


মানুষ আমাকে নিয়ে বলে, কী অনায়াসেই না লোকটা খেলে। কিন্তু সত্যিটা হলো, কাজটাকে ‘অনায়াস’ দেখানোর জন্য আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। বছরের পর বছর আমি আর্তচিৎকার করেছি, খেঁকিয়ে উঠেছি, র‍্যাকেট ছুড়ে ফেলেছি...তারপর মাথা ঠান্ডা রাখতে শিখেছি।
সমাবর্তনেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে দিয়েছে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব হিউমেন লেটারস’ছবি: এএফপি


আত্মোপলব্ধিটা এসেছিল ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিকেই। যখন ইতালীয় এক প্রতিপক্ষ বলেছিল, ‘প্রথম দুই ঘণ্টা রজার থাকবে চালকের আসনে। তারপরই পাশার দান উল্টে যাবে।’

তার কথা শুনে শুরুতে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। পরে বুঝেছি, এ কথার মানে কী। প্রথম দুই ঘণ্টা ভালো খেলতে সবাই পারে। শুরুতে সবাই-ই ফিট থাকে, ক্ষিপ্র থাকে। মাথা পরিষ্কার থাকে। কিন্তু এরপরই একসময় পা টলমল করে। ভাবনা এলোমেলো হয়ে আসে, সংযম হারিয়ে যায়।

তাই আমি আরও কঠোর প্রশিক্ষণ শুরু করি। আর বুঝতে পারি, অনায়াসে জিততে পারাটাই সবচেয়ে বড় অর্জন।








গা গরম করার সময়, টুর্নামেন্ট চলার সময় খুব ‘সহজ’ দেখায় বলে আমার সুনাম আছে। অথচ এর পেছনে যে কত কঠোর প্রশিক্ষণ আছে, লোকে ভাবতেও পারবে না। সেই পরিশ্রমটা কেউ দেখে না।

শুধুই একটা পয়েন্ট


কঠোর পরিশ্রম সত্ত্বেও তুমি হেরে যেতেই পারো। আমি হেরেছি।

টেনিস বড় নিষ্ঠুর। প্রতিটি টুর্নামেন্ট একইভাবে শেষ হয়। একজন ট্রফি জেতে। অন্যরা প্লেনে করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে জানালা দিয়ে তাকিয়ে ভাবে, ‘ইশ্‌! এমন একটা শট কীভাবে মিস করলাম!’

ধরো, আজ তোমাদের সঙ্গেও যদি এমন হতো? যদি কেবল একজনের হাতে ডিগ্রি তুলে ‍দিয়ে বলা হতো, ‘সবাই করতালি দাও। যে স্নাতক হলে, তোমাকে অভিনন্দন। অন্যদের জন্য শুভকামনা।’ কেমন লাগত বলো?

এ কারণেই না হারার আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছি, কিন্তু হেরেছি। আমার জন্য সবচেয়ে বড় পরাজয়ের মুহূর্ত ছিল ২০০৮ সালের উইম্বলডনের ফাইনাল। আমি বনাম (রাফায়েল) নাদাল। অনেকে বলে, ওটাই টেনিস ইতিহাসের সেরা ম্যাচ। রাফার প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলছি, খেলাটা আরও অনেক অনেক রোমাঞ্চপূর্ণ হতো, যদি আমি জিততাম।

টেনিসে নিখুঁত খেলা অসম্ভব। আমি ক্যারিয়ারে ১ হাজার ৫২৬টি ম্যাচ খেলেছি। ৮০ শতাংশ ম্যাচে জিতেছি। অথচ কত শতাংশ পয়েন্ট পেয়েছি বলো তো? মাত্র ৫৪ শতাংশ।

কেন বলছি এসব কথা? যখন তুমি একটা পয়েন্টের জন্য খেলো, তখন ওই পয়েন্টই তোমার জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন পয়েন্টটা পেছনে ফেলে আসো, তখন সেটা শুধুই একটা ‘পয়েন্ট’। আর কিচ্ছু না।

জীবনে যে খেলাই খেলো না কেন, কখনো না কখনো তুমি হারবে। একটা পয়েন্ট হারাবে, একটা ম্যাচ হারাবে, একটা মৌসুম হারাবে, একটা চাকরি হারাবে...অনেকটা রোলারকোস্টার রাইডের মতো। যেখানে অনেক ওঠানামা। পৃথিবীর সেরা মানুষেরা কিন্তু এ কারণে সেরা নন যে তাঁরা প্রতিটি পয়েন্ট জেতেন। বরং তাঁরা জানেন, একটা পয়েন্ট হারালে কীভাবে সামাল দিয়ে আবার একটা পয়েন্ট জিততে হয়। (সংক্ষেপিত)

সূত্র: ডার্টমাউথের ওয়েবসাইট

Wednesday, April 4, 2018

শেরিল স্যান্ডবার্গ,ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা



ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ। টাইম সাময়িকীর করা বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় আছে তাঁর নাম। গত ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির (ভার্জিনিয়া টেক) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি



দুই বছর এগারো দিন আগে আমি আমার স্বামী ডেভকে হারিয়েছি। আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিতভাবে। ওর কথা বলতে গেলে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়। কারণ, আমি এখনো ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারি না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময়ও ভেবেছিলাম, দিনটা আর দশটা দিনের মতোই কাটবে। অথচ ওই এক দিনেই আমার জীবনটা বদলে গিয়েছিল।


আমি জানি, আজ তোমাদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। বাইরে সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে। আর আমি কি না এখানে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর কথা বলছি। এর পেছনে একটা কারণ আছে। কথা দিচ্ছি, আমি তোমাদের মন খারাপ করিয়ে দেব না।


ডেভের মৃত্যুর পর পৃথিবীর প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। সে কথাই আজ তোমাদের বলব। কারণ, আমার বিশ্বাস, আমার অভিজ্ঞতা তোমাদের একটা সুস্থ-সুন্দর জীবনের দিকনির্দেশনা দেবে। আজ এখানে পৌঁছানোর পেছনে তোমাদের প্রত্যেকের নিশ্চয়ই বিচিত্র সব গল্প আছে। কেউ কেউ প্রচণ্ড মানসিক চাপের মুখোমুখি হয়েছ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা তোমাদের হয়েছে। হতাশা, মানসিক যন্ত্রণা, হারানোর ব্যথা, অসুস্থতা—এ সব অনুভূতি খুব ব্যক্তিগত, কিন্তু সর্বজনীন। কিছু কিছু ব্যথা আবার একার নয়। ভার্জিনিয়া টেকের শিক্ষার্থীরা খুব ভালো করে সেটা জানে। আজ সকালে ড্রিলফিল্ডের ‘থার্টি টু হকি স্টোন’-এর সামনে দিয়ে আসার সময় আমি যেমন মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিলাম, তোমরাও নিশ্চয়ই তা-ই করো। (২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ভার্জিনিয়া টেকের ৩২ জন শিক্ষার্থী। তাঁদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২টি স্মৃতিস্তম্ভ আছে—বি.স.) তোমরা জানো, এক মুহূর্তের মধ্যে জীবনটা বদলে যেতে পারে। তোমরা জানো, এই সময়ে সবার একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হয়, শোক অনুভব করতে হয়, নিজেদের টেনে তুলতে হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা, একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।


আমাদের সবারই একটা দল প্রয়োজন। বিশেষ করে তখন, যখন জীবন আমাদের সামনে বাধার দেয়াল তুলে দেয়। ভার্জিনিয়া টেকের বাইরেও তোমরা একেকটা দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই দলটাই সাহায্যের প্রয়োজন হলে এগিয়ে আসবে। আমার জন্য অবশ্য একটা দলের অংশ হওয়া খুব কঠিন ছিল। ডেভের মৃত্যুর আগে আমি আসলে মানুষকে বিরক্ত করতে চাইতাম না। হ্যাঁ, আমার কাছে ব্যাপারটা ‘বিরক্ত করা’ই মনে হতো। কিন্তু ডেভ চলে যাওয়ার পর সব বদলে গেল। কখনো ভাবিনি পরিবার, বন্ধু আর সহকর্মীরা আমার জীবনে এতটা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে।


তোমাদের মধ্যে কেউ কি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছ? ভাবছ ভাগ্য তোমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? মাঝেমধ্যে আমারও এমন ভয় হয়। এই ভয়ের বিরুদ্ধে তুমি কী নিয়ে লড়বে জানো? আশা—ছোট্ট একটা শব্দে লুকিয়ে আছে অনেক বড় ভাবার্থ।


আমরা ভাবি ‘আশা’ প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সম্পদ। কিন্তু ‘ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতার’ পাশাপাশি আশাও কিন্তু দলগতভাবে গড়ে উঠতে পারে। দুই দিন আগে আমি চার্লসটনের মাদার ইমানুয়েল চার্চে গিয়েছিলাম। আমরা সবাই জানি দুই বছর আগে সেখানে গোলাগুলিতে একজন যাজক এবং আটজন ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এরপর যা ঘটেছে তা সত্যিই অনন্য। ঘৃণার বদলে সেখানকার সব মানুষ ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা একসঙ্গে বর্ণবাদ ও হিংস্রতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় যাজক জারমেইন ওয়াটকিনস যেমন খুব সুন্দর করে বলেন, ‘ঘৃণাকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়। বিভেদকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়। আশাহীনতাকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়।’


ফেসবুকে আমি অনেকের লেখাই পড়ি। কিন্তু প্যারিসের সাংবাদিক অ্যান্টয়েন লেইরিসের একটা লেখা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। তাঁর স্ত্রী হেলেন ২০১৫ সালে প্যারিস হামলায় নিহত হয়েছিলেন। এর মাত্র দুই দিন পর লেইরিস তাঁর স্ত্রীর হত্যাকারীদের উদ্দেশে একটা খোলা চিঠি লিখেছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘শুক্রবার রাতে তোমরা কেড়ে নিয়েছ একজন অন্য রকম মানুষকে, আমার ভালোবাসাকে, আমার সন্তানের মাকে। কিন্তু আমার ঘৃণা তোমরা পাবে না। আমার ১৭ মাস বয়সী ছোট্ট ছেলেটা একজন সুখী, স্বাধীন মানুষ হয়ে বেড়ে উঠবে, প্রতিদিন সে হাসবে খেলবে আর তোমাদের বুড়ো আঙুল দেখাবে। কারণ, তার ঘৃণাও তোমরা পাবে না।’


এ রকম অসামান্য শক্তি আমাদেরও শক্তি দেয়। এমন আশা আমাদের মনেও আশা জাগায়। এভাবেই আমরা একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াই, একে অপরকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করি।


ক্যাম্পাস ছেড়ে তোমরা বাইরের পৃথিবীতে পা রাখতে যাচ্ছ। আমি তোমাদের বলতে চাই, যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নিজের মধ্যে গড়ে তোলো। শোক কিংবা হতাশা যখন আঘাত করে, নিশ্চিত থেকো, খুব গভীরে সেটা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা তোমার আছে।


দুই বছর আগে কেউ যদি আমাকে বলত, ‘ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েও তুমি জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে’—আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন সত্যিই তাই হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ আমার সন্তানদের জন্য, আমার পরিবারের জন্য, আমার বন্ধু, কাজ আর এই জীবনটার জন্য।


কিছুদিন আগে আমার কাজিন লরার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। স্নাতকেরা, জীবনের ৫০টা বছর যে কী দ্রুত কেটে যায় আর তখন যে নিজেকে কতটা বৃদ্ধ মনে হয়, এই অনুভূতি তোমরা বুঝবে না। তোমাদের মা-বাবা নিশ্চয়ই বোঝেন। লরাকে ফোন করে আমি বলেছিলাম, ‘শুভ জন্মদিন লরা। শুধু এ কথা বলার জন্যই আমি তোমাকে ফোন করিনি। তুমি হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভাবতে বসেছ, “হায়, বয়সটা ৫০ ছুঁয়ে ফেলল!” সে ক্ষেত্রে আমি তোমাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এভাবে ভেব না। মনে রেখ, এ বছর তুমি যেমন ৫০ ছুঁয়েছ, ডেভ বেঁচে থাকলে ওর বয়সও ৫০ হতো। ডেভ পারেনি, তুমি তো পেরেছ।’ বুড়ো হই বা না হই, বয়স কোনো কৌতুকের বিষয় নয়। প্রতিটা বছর, প্রতিটা মুহূর্ত...এমনকি এই যে বাইরে বৃষ্টি পড়ছে...এটাও জীবনের একটা উপহার।


নতুন বছরে আমার প্রতিজ্ঞা ছিল, ঘুমাতে যাওয়ার আগে দিনের তিনটি আনন্দের মুহূর্ত আমি লিখে রাখব। এই সহজ অভ্যাস আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আগে প্রতি রাতে বিছানায় শুয়ে ভাবতাম, কত কী ভুল করলাম, আগামী দিন না জানি কত ভুল করতে যাচ্ছি। এখন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভাবি, আজ কী কী পেলাম। দারুণ সব মুহূর্তের স্মৃতি দিয়ে আমার নোটবুক ভারী হয়ে উঠছে। তোমরাও চেষ্টা করে দেখতে পারো, আজই শুরু করো। আজকের দিনটাতে নিশ্চয়ই লেখার মতো অনেক কিছু তুমি পাবে।


আর হ্যাঁ, আজ রাতে আমার দিনের সেরা তিন মুহূর্তের মধ্যে আমি তোমাদের কথাও লিখব। লিখব, তোমরা আমার মধ্যে আশা আর ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি সঞ্চার করেছ।


অবশেষে আমি যে আমার লম্বা বক্তব্যটা শেষ করতে যাচ্ছি, তোমরাও এই আনন্দের মুহূর্তটার কথা লিখে রাখতে পারো (হাসি)। পুরো পৃথিবী তোমাদের অপেক্ষায় আছে। এই অপার সম্ভাবনাকে তোমরা কীভাবে কাজে লাগাও, দেখার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।


অভিনন্দন আবারও। (সংক্ষেপিত)


ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ


সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

Saturday, November 7, 2015

হতে হবে আশাবাদী: বিল গেটস

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের অন্যতম। তাঁর জন্ম ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন এবং মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি মাইক্রোসফটের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে জনকল্যাণমূলক নানা কাজে যুক্ত আছেন।
বিল গেটসঅভিনন্দন, ২০১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা৷ মেলিন্ডা ও আমি আজ এখানে উপস্থিত হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত৷ তোমাদের এই ক্যাম্পাস অনেক দিক থেকেই অসাধারণ৷ তবে আমাদের যদি একটি শব্দে বলতে হয় স্ট্যানফোর্ডের কোন বিষয়কে আমরা সবচেয়ে ভালোবাসি, তা হবে আশাবাদী মনোভাব৷
১৯৭৫ সালে এই আশা নিয়েই আমি বোস্টনের এক কলেজ ছেড়ে এসে কাজে নেমে পড়েছিলাম৷ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, কম্পিউটার ও সফটওয়্যার পৃথিবীজুড়ে মানুষের জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করতে পারবে, পৃথিবীকে আরও অনেক উন্নত করে তুলবে৷ কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে৷ আমরা যা শিখেছি, আজ সেসব তোমাদের বলতে চাই৷ আর জানাতে চাই, কীভাবে আমরা সবাই আরও অনেক মানুষের জন্য অনেক কিছু করতে পারি৷
যখন পল অ্যালেন আর আমি মাইক্রোসফট শুরু করেছিলাম, তখন আমদের লক্ষ্য ছিল কম্পিউটার ও সফটওয়্যারের ক্ষমতাকে সাধারণ মানুষের কাজে লাগানো৷ ১৯৯৭ সালে আমি ব্যবসার কাজে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় যাই৷ একদিন আমি কৌতূহলবশত শহরের একটু দূরে সোয়েটো নামে একটা জায়গায় যাই; এমন জায়গা আমি জীবনে কখনো দেখিনি৷ মাইক্রোসফট সেখানে একটি কমিউনিটি সেন্টারে কম্পিউটার ও সফটয়্যার বিতরণ করেছিল, যেভাবে আমেরিকায় আমরা কাজ করতাম৷ কিন্তু আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমি বুঝে গেলাম, এটা আমেরিকা নয়৷ এর আগে আমি দারিদ্র্যকে দেখেছিলাম পরিসংখ্যানে, নিজের চোখে নয়৷ সেখানে গিয়ে আমি দেখলাম, কীভাবে মানুষ বিদ্যুৎ, পানি, টয়লেট ছাড়াই বস্তিতে থাকছে৷ বেশির ভাগের পায়েই কোনো জুতা ছিল না, জুতা পায়ে হাঁটার মতো রাস্তাও ছিল না৷ যে কমিউনিটি সেন্টারে আমরা কম্পিউটার দান করেছিলাম, সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা ছিল না৷ তাই তারা ২০০ ফুট লম্বা তার দিয়ে ডিজেলচালিত একটি জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়ে কম্পিউটার চালিয়ে রেখেছিল৷ অবস্থা দেখে আমি ভালোভাবেই বুঝলাম, যে মুহূর্তে আমি আর আমার সঙ্গের লোকজন চলে যাব, তৎক্ষণাৎ এই জেনারেটরও অন্য কোথাও চলে যাবে৷ আর কমিউনিটি সেন্টারের লোকেরাও তাদের জীবনের অন্য হাজার সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত হয়ে পড়বে; সেসব সমস্যা কখনো কম্পিউটার দিয়ে সমাধান করা যায় না৷
গণমাধ্যমের সামনে এসে আমি আগে থেকে তৈরি করে রাখা বক্তৃতা পড়ছিলাম৷ বলছিলাম, ‘সোয়েটো প্রযুক্তির বিভাজনকে ঘুচিয়ে দেওয়ার যাত্রায় একটি মাইলফলকের নাম৷’ কিন্তু মুখে যা-ই বলি, আমি বুঝতে পারছিলাম, এসব কথার কোনো অর্থ নেই৷ 
সোয়েটোতে যাওয়ার আগে আমি ভাবতাম, আমি পৃথিবীর সমস্যা বুঝি, কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো নিয়েই আমার কোনো ধারণা ছিল না৷ আমার এত অসহায় লেগেছিল যে আমি নিজের বিশ্বাসকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলাম, আদৌ কি উদ্ভাবনের মাধ্যমে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব? আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, দ্বিতীয়বার আফ্রিকায় পা দেওয়ার আগে আমাকে বুঝতে হবে দারিদ্র্য আসলে কী৷
অনেক পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় আমি একটি যক্ষা হাসপাতাল দেখতে গিয়েছিলাম৷ সেটি একটি বিশেষ ধরনের যক্ষা রোগীদের জন্য, যাদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ ভাগেরও কম৷ গোটা হাসপাতাল রোগীদের ভিড়ে উপচে পড়ছে৷ রোগীদের মধ্যে আমি এক নারীর সঙ্গে কথা বললাম, তার বয়স মাত্র ত্রিশের কোঠায়৷ সে আগে এক যক্ষা হাসপাতালে কাজ করত, একদিন তার নিজেরও যক্ষা ধরা পড়ে, সঙ্গে এইডস৷ সে জানত, তার দিন ফুরিয়ে এসেছে৷ আর তার মৃত্যুর পর যখন সেই বিছানা খালি হয়ে যাবে, সেখানে জায়গা করে নিতেও রোগীদের এক বিশাল লাইন অপেক্ষা করে আছে৷ তারা অপেক্ষা করছে সেই দিনের৷
আমি গাড়িতে উঠে সেখানকার এক ডাক্তারকে বললাম, ‘হ্যাঁ, আমি জানি এ ধরনের যক্ষা সারিয়ে তোলা মুশকিল৷ কিন্তু কোনো না কোনো উপায় নিশ্চয়ই আছে৷ এসব মানুষের জন্য আমাদের কিছু করতেই হবে৷’
আমি আজ আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি এ বছর আমরা যক্ষার এক নতুন ধরনের ওষুধের পরীক্ষা করতে যাচ্ছি৷ আগে যেখানে ১৮ মাস ধরে প্রায় দুই হাজার ডলার খরচের পরও শতকরা ৫০ জনের বেশি রোগীকে সুস্থ করা যেত না, এখন সেখানে ছয় মাসের চিকিৎসায় ১০০ ডলারের কম খরচেই শতকরা ৮০ থেকে ৯০ জন রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে৷ এখানেই আশাবাদের শক্তি নিহিত৷ কে বলেছে আমরা দারিদ্র্য কিংবা রোগব্যাধিকে মির্মূল করতে পারব না? আমরা অবশ্যই পারব৷ সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন, আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে অনুপ্রেরণা জোগায়৷ কিন্তু সমস্যাকে নিজের চোখে না দেখলে শুধু আশা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায় না৷
আমি হতাশাবাদীদের দলে নই৷ কিন্তু আমাদের স্বীকার করতে হবে যে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে যদি আমরা বৈষম্য দূরীকরণের কাজে না লাগাই, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা এমন সব উদ্ভাবন নিয়ে বসে থাকব, যা পৃথিবীকে আরও বিভক্ত করে ফেলবে৷ উদ্ভাবন দিয়ে কী হবে, যদি তা স্কুলে শিক্ষার মান না বাড়ায়? যদি ম্যালেরিয়া নির্মূল করা না যায়, দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব না হয়, দরিদ্র কৃষকের অন্নের নিশ্চয়তা না থাকে?
তোমরা স্নাতকেরা অসংখ্য উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেবে, পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ তোমাদের বয়সে আমি পৃথিবীকে যতটা চিনতাম, আমি বিশ্বাস করি, আজ তোমরা তার চেয়ে অনেক বেশি জানো৷ আমি যা করেছি, তোমরা তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করতে পারবে, যদি তোমরা এতে তোমাদের মনপ্রাণ ঢেলে দাও৷ আমি সেই প্রত্যাশায় রইলাম৷
সূত্র: স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট। 
১৫ জুন, ২০১৪ যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দেওয়া বিল গেটসের বক্তব্যের নির্বাচিত অংশের অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার

মানুষ চিনতে হবে - ক্রিস গার্ডনার

ক্রিস গার্ডনার একজন আমেরিকান উদ্যোক্তা৷ গৃহহীন অবস্থা থেকে নিজের চেষ্টায় গড়ে তুলেছেন তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গার্ডনার রিচ অ্যান্ড কোম্পানি। তাঁর জীবনী অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্য পারস্যুট অব হ্যাপিনেস’ বিশ্বব্যাপী তুমুল প্রশংসিত হয়েছে। ২০০৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে’তে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ক্রিস গার্ডনার এই বক্তব্য দেন।
ক্রিস গার্ডনারপ্রথমেই আমি তোমাদের সঙ্গে যে কথাটা ভাগাভাগি করে নিতে চাই, সেটা হলো জীবনে তোমাদের সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটার মোকাবিলা করতে হবে, সেটা হলো মানুষ। সেসব মানুষ, যাদের সঙ্গে বা যাদের জন্য তুমি কাজ করবে, তারা সব সময়ই চাইবে তোমাকে তোমার কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে। আজকের মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে তারা তোমাকে শিখিয়ে দেবে কী বলতে হবে, আর কীভাবেই বা তা বলতে হবে। সেদিন তোমাদের উচিত হবে, বিনয়ের সঙ্গে তাদের প্রত্যাখ্যান করা, এতে তোমাদের ভালো হবে।
আমি আজকের বক্তৃতার জন্য প্রথম পছন্দ ছিলাম না, হয়তো দ্বিতীয় পছন্দও না। কিন্তু সম্ভবত আমিই একমাত্র ব্যক্তি, যে তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি। একই সঙ্গে আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চড়ে তোমাদের কাছে আসতে পারতাম। তোমাদের আমন্ত্রণ পাওয়ামাত্রই আমি তাতে সাড়া দিয়েছিলাম। তোমাদের অনেকে হয়তো জানো না, যখন ১৪ মাসের একটি শিশুকে ব্যাকপ্যাকে নিয়ে আমি কাজ করতাম৷ আমি ও আমার ছেলে তখন অনেক দিন এই ক্যাম্পাসে ঘুমিয়েছি। সে অবস্থান থেকে উঠে এসে আজকে যখন আমি এই মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছি৷ মনে হচ্ছে, আজকে যেন আমারও সমাবর্তন হচ্ছে। 
আরও অনেক কথা বলার আগে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই সেসব মা-বাবা ও আত্মার আত্মীয়দের, যাঁদের জন্য আজকে তোমরা এখানে। জীবনের বড় সাফল্যগুলো কেউ একা অর্জন করতে পারে না। আজকে তোমাদের প্রত্যেকে এখানে পৌঁছাতে পেরেছ, কেননা চলার পথে তোমাকে কেউ না কেউ সাহায্য করেছিল। আমি বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার মতো সিঙ্গেল মা-বাবাকে। সেসব বাবাকে যাঁরা সন্তানের জন্য মা হয়েছেন এবং সেসব মাকে যাঁরা পালন করেছেন বাবার দায়িত্ব। আমাদের জীবনে সবচেয়ে ভালো কিছু হলো, আমাদের মা-বাবা। কিন্তু তাঁরা ছাড়াও তোমার সাফল্যের পেছনে নিশ্চয় অন্য কোনো ব্যক্তির অনুপ্রেরণা আছে। কোনো একসময়ে কেউ হয়তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিল, তোমার মধ্যে অনন্ত সম্ভাবনা দেখেছিল, তোমাকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিয়েছিল। সে ব্যক্তি তোমার ছোটবেলার শিক্ষক হতে পারেন, হাইস্কুলের কাউন্সিলর হতে পারেন অথবা হতে পারেন অতিসাধারণ একজন কর্মচারী। তুমি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করো। ই-মেইল কোরো না, মেসেজ পাঠিয়ো না, ফোন কোরো না—তাঁর সামনে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরো, তাঁর সঙ্গে হাসো, তাঁর হাত ধরে কাঁদো; তোমার ভালো লাগবে। আর যাঁরা বলেছিল তোমাকে দিয়ে হবে না, তুমি পারবে না; তাঁদের গিয়ে জিজ্ঞাসা করো তোমার সম্পর্কে এখন তাঁদের কী অভিমত। 
আমি যখন নিজের ভাবনাগুলোকে সাজিয়ে নিচ্ছিলাম তোমাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য, আমি ভাবছিলাম তোমাদের জায়গায় আমি হলে কী শুনতে চাইতাম। দেশের অর্থনীতির অবস্থা, ওয়াল স্ট্রিটের হালচাল নাকি চাকরির বাজারের খবর? না, এর কোনোটিই আমি জানতে চাইতাম না। আমি জানতে চাইতাম একজন আমেরিকান হিসেবে আমাদের স্বপ্নের কথা, পূর্বপ্রজন্ম যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ দেশের জন্য কাজ করেছেন তার কথা। আমি জানতে চাইতাম যে আমাদের চেক ইন অ্যাকাউন্টের ব্যালান্সের চেয়ে আমাদের জীবনের ভারসাম্য অধিক জরুরি। জীবনে প্রার্থনার চেয়ে প্রশংসা অনেক বেশি দরকারি। আমি চাইতাম যাতে সমাবর্তন বক্তা আমাদের বলেন, বস্তুর আড়ালে নিজেকে ঢেকে রাখাটা বোকামি৷ কারণ, আমাদের একসময় ফিরে আসতে হবে পরিবার ও পরিজনদের কাছে। আমি তোমাদের জানাতে চাই যে তুমি কী করো, সেটা দিয়ে নিজেকে বিচার কোরো না । নিজের মোট আর্থিক সম্পদ দিয়ে মানবিক শক্তির তুলনা টেনো না। তোমার চারপাশে তুমি অনেক জিনিস দেখতে পাবে, কিন্তু জেনে রেখো সুখী হওয়ার জন্য তোমার এর কোনোটিরই প্রয়োজন নেই। 
তোমাদের জন্য এটাই আমার স্বপ্ন, যার ভিত্তি প্রোথিত আছে অতীতে, এটা বর্ণিত হচ্ছে বর্তমানে কিন্তু এর লক্ষ্য সুদূর অতীত ঘিরে। তোমরা আজকে বৃহৎ এক পৃথিবীতে পা রাখতে যাচ্ছো। তোমরা যা-ই করো না কেন, সব সময়ই সুখের সন্ধান করো। সুখী হও। 
সবাইকে ধন্যবাদ।

সফল হওয়ার পূর্বশর্ত ‘পাগল’ হওয়া - শাহরুখ খান

১৬ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন ভারতীয় অভিনেতা শাহরুখ খান। সেখানেই শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য রেখেছেন তিনি

ডক্টরেট ডিগ্রি আমার জন্য নিশ্চয়ই একটা সম্মানজনক ব্যাপার। আমি যে পেশায় আছি, সেখানে ‘সবিনয়ে’ শব্দটা প্রায়ই ব্যবহার হয়। এ ধরনের ‘কপট তোয়াজ’ আমার ঠিক পছন্দ না, তাই এই শব্দটা আমি ব্যবহার করছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, এ রকম অনুষ্ঠানগুলোই আমাকে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে আমি কিছু নির্দেশনাও পেয়েছি। আমাকে বলা হয়েছে ‘সাফল্য’ সম্পর্কে ‘পরামর্শ’ দিতে!জীবন সম্পর্কে আমি যা কিছু শিখেছি, তার বেশির ভাগই চলচ্চিত্র থেকে পাওয়া।আমার ক্যারিয়ারের প্রথম দিককার একটি চলচ্চিত্রের নাম দিওয়ানা (হিন্দিতে দিওয়ানা শব্দটা প্রেম-সংক্রান্ত কিংবা ভালো কিছুর নেশায় ‘পাগলামি’ অর্থে ব্যবহার করা হয়।) এই চলচ্চিত্র থেকে আমি যা শিখেছি, জীবনে সুখী ও সফল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো ‘পাগল’ হওয়া। ভেব না জীবনের ছোট ছোট খ্যাপাটে ভাবনাগুলো তোমার জন্য এতটাই ক্ষতিকর যে সারা জীবন এসব চিন্তাকে চেপে রাখতে হবে। পাগলামিগুলোকে স্বীকার করে নাও, আর সেটাকেই নিজের জীবন গড়তে কাজে লাগাও। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে প্রতিভাবান মানুষ, যাঁরা বিপ্লব করেছেন, যাঁরা উদ্ভাবন করেছেন, আবিষ্কার করেছেন, তাঁরা পেরেছেন কারণ তাঁরা নিজের মানসিক গঠনকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। ‘স্বাভাবিক’ বলে কিছু নেই। এটা কেবল ‘প্রাণহীন’ এর প্রতিশব্দ!দিওয়ানার পরপরই আমি চমৎকার নামে একটা ছবিতে অভিনয় করেছি, যেখানে আমার চরিত্রটা একজন দুর্ভাগা নায়কের। হিন্দিতে ‘চমৎকার’ শব্দের অর্থ সহজ কথায় ‘মিরাকল’ বা কোনো অলৌকিক ঘটনা। এই ছবি থেকে আমার শিক্ষা অনেকটা এমন: ধোঁকায় পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে হঠাৎ একদিন যদি আবিষ্কার কর, তুমি একটা গর্তের ভেতর ঘুমিয়ে আছ, ভয় পেয়ো না। নিশ্চয়ই অদূরেই কোনো ‘মিরাকল’ অপেক্ষা করছে। সেই ‘মিরাকল’ কোনো ভূতও হতে পারে! তোমার কাজ হলো চুপচাপ শুয়ে থাকা। একটু অন্যভাবে বললে, ‘বেঁচে থাকা’ই হলো সেই অলৌকিক ঘটনা যার জন্য তুমি অপেক্ষা করছ। তোমার যা কিছু আছে, সব কাজে লাগাও। মনের জোর, আশপাশের মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা, সুস্বাস্থ্য, সৌভাগ্য...যত উপহার জীবন তোমাকে দিয়েছে তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার কর। জীবনকে শ্রদ্ধা কর। জীবনের প্রতিটা উপহার, প্রতিটা মুহূর্তকে নষ্ট হতে না দিয়ে কাজে লাগাও। সাফল্যের কোনো মাপকাঠি নেই কিন্তু জীবন তোমাকে যা কিছু দিয়েছে তার পুরোটা কাজে লাগানোর সুযোগ তোমার আছে।তুমি জানো না, ভবিষ্যতে তোমার জন্য কী অপেক্ষা করছে। জানো না ‘আগামীকাল’ বলে কিছু আছে না নেই। কাল হো না হো নামের একটা ছবিতে আমি একেবারে তরুণ বয়সে মারা যাই। এই ছবির মূল কথাও সেটাই। আমি কখনোই আমার দুই বড় সন্তানকে এই ছবিটা শেষ পর্যন্ত দেখতে দিইনি। এমনকি আমরা ছবির অন্য রকম একটা সমাপ্তি তৈরি করেছিলাম শুধু ওদের জন্য। কিন্তু এখন ওরা তোমাদের মতো বড় হয়েছে। শিগগিরই নিজের জীবনে নিজের মতো করে একটা চমৎকার যাত্রা শুরু করবে। আমি ওদের এই রোমাঞ্চ থেকে আগলে রাখতে চাই না। বরং আমার অভিজ্ঞতা আর জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে যতটা সম্ভব ওদের বলতে চাই, এই সময়টাতেই যা পার করে নাও।
মুহূর্তে বাঁচ। আজকে বাঁচ। চঞ্চল চোখে তুমি হয়তো দেখতে পাচ্ছ না। কিন্তু এটাই কাজে লাগানোর শ্রেষ্ঠ সময়। আমি তোমাদের সবাইকে শুধু এটুকুই বোঝাতে চাই, এই সময়টা তোমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পড়ালেখা কর। কষ্ট কর। নিয়ম দিয়ে নিজেকে বেঁধে রেখ না। কখনো কাউকে দুঃখ দিয়ো না...আর কখনোই অন্যের স্বপ্নে বেঁচ না। যতবারই ভুল কর না কেন, হেরে যাও না কেন, যতই মনে হোক না কেন সারা দুনিয়া তোমার বিপক্ষে, একটা কথা মনে রেখ—বব মার্লের ভাষায় যদি বলি, ‘...অ্যাট দ্য অ্যান্ড এভরিথিংস গনা বি অলরাইট’ (দিন শেষে সব ঠিক হয়ে যাবে)। আর আমার ভাষায় যদি বলি, জীবনটা হিন্দি সিনেমার মতো। শেষে গিয়ে সব ঠিক হয়ে যায়। আর যদি ঠিক না-ও হয়, তাহলে বুঝতে হবে ‘শেষ’ এখনো আসেনি। কারণ ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরি দোস্ত!’ (কাহিনি এখনো শেষ হয়ে যায়নি বন্ধু) এটাকেই জীবনের একমাত্র সত্যি হিসেবে মেনে নাও।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: মারুফ ইসলাম