Showing posts with label অনুকরনীয়. Show all posts
Showing posts with label অনুকরনীয়. Show all posts

Wednesday, April 4, 2018

শেরিল স্যান্ডবার্গ,ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা



ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ। টাইম সাময়িকীর করা বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় আছে তাঁর নাম। গত ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির (ভার্জিনিয়া টেক) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি



দুই বছর এগারো দিন আগে আমি আমার স্বামী ডেভকে হারিয়েছি। আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিতভাবে। ওর কথা বলতে গেলে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়। কারণ, আমি এখনো ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারি না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময়ও ভেবেছিলাম, দিনটা আর দশটা দিনের মতোই কাটবে। অথচ ওই এক দিনেই আমার জীবনটা বদলে গিয়েছিল।


আমি জানি, আজ তোমাদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। বাইরে সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে। আর আমি কি না এখানে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর কথা বলছি। এর পেছনে একটা কারণ আছে। কথা দিচ্ছি, আমি তোমাদের মন খারাপ করিয়ে দেব না।


ডেভের মৃত্যুর পর পৃথিবীর প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। সে কথাই আজ তোমাদের বলব। কারণ, আমার বিশ্বাস, আমার অভিজ্ঞতা তোমাদের একটা সুস্থ-সুন্দর জীবনের দিকনির্দেশনা দেবে। আজ এখানে পৌঁছানোর পেছনে তোমাদের প্রত্যেকের নিশ্চয়ই বিচিত্র সব গল্প আছে। কেউ কেউ প্রচণ্ড মানসিক চাপের মুখোমুখি হয়েছ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা তোমাদের হয়েছে। হতাশা, মানসিক যন্ত্রণা, হারানোর ব্যথা, অসুস্থতা—এ সব অনুভূতি খুব ব্যক্তিগত, কিন্তু সর্বজনীন। কিছু কিছু ব্যথা আবার একার নয়। ভার্জিনিয়া টেকের শিক্ষার্থীরা খুব ভালো করে সেটা জানে। আজ সকালে ড্রিলফিল্ডের ‘থার্টি টু হকি স্টোন’-এর সামনে দিয়ে আসার সময় আমি যেমন মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিলাম, তোমরাও নিশ্চয়ই তা-ই করো। (২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ভার্জিনিয়া টেকের ৩২ জন শিক্ষার্থী। তাঁদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২টি স্মৃতিস্তম্ভ আছে—বি.স.) তোমরা জানো, এক মুহূর্তের মধ্যে জীবনটা বদলে যেতে পারে। তোমরা জানো, এই সময়ে সবার একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হয়, শোক অনুভব করতে হয়, নিজেদের টেনে তুলতে হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা, একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।


আমাদের সবারই একটা দল প্রয়োজন। বিশেষ করে তখন, যখন জীবন আমাদের সামনে বাধার দেয়াল তুলে দেয়। ভার্জিনিয়া টেকের বাইরেও তোমরা একেকটা দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই দলটাই সাহায্যের প্রয়োজন হলে এগিয়ে আসবে। আমার জন্য অবশ্য একটা দলের অংশ হওয়া খুব কঠিন ছিল। ডেভের মৃত্যুর আগে আমি আসলে মানুষকে বিরক্ত করতে চাইতাম না। হ্যাঁ, আমার কাছে ব্যাপারটা ‘বিরক্ত করা’ই মনে হতো। কিন্তু ডেভ চলে যাওয়ার পর সব বদলে গেল। কখনো ভাবিনি পরিবার, বন্ধু আর সহকর্মীরা আমার জীবনে এতটা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে।


তোমাদের মধ্যে কেউ কি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছ? ভাবছ ভাগ্য তোমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? মাঝেমধ্যে আমারও এমন ভয় হয়। এই ভয়ের বিরুদ্ধে তুমি কী নিয়ে লড়বে জানো? আশা—ছোট্ট একটা শব্দে লুকিয়ে আছে অনেক বড় ভাবার্থ।


আমরা ভাবি ‘আশা’ প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সম্পদ। কিন্তু ‘ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতার’ পাশাপাশি আশাও কিন্তু দলগতভাবে গড়ে উঠতে পারে। দুই দিন আগে আমি চার্লসটনের মাদার ইমানুয়েল চার্চে গিয়েছিলাম। আমরা সবাই জানি দুই বছর আগে সেখানে গোলাগুলিতে একজন যাজক এবং আটজন ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এরপর যা ঘটেছে তা সত্যিই অনন্য। ঘৃণার বদলে সেখানকার সব মানুষ ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা একসঙ্গে বর্ণবাদ ও হিংস্রতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় যাজক জারমেইন ওয়াটকিনস যেমন খুব সুন্দর করে বলেন, ‘ঘৃণাকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়। বিভেদকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়। আশাহীনতাকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়।’


ফেসবুকে আমি অনেকের লেখাই পড়ি। কিন্তু প্যারিসের সাংবাদিক অ্যান্টয়েন লেইরিসের একটা লেখা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। তাঁর স্ত্রী হেলেন ২০১৫ সালে প্যারিস হামলায় নিহত হয়েছিলেন। এর মাত্র দুই দিন পর লেইরিস তাঁর স্ত্রীর হত্যাকারীদের উদ্দেশে একটা খোলা চিঠি লিখেছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘শুক্রবার রাতে তোমরা কেড়ে নিয়েছ একজন অন্য রকম মানুষকে, আমার ভালোবাসাকে, আমার সন্তানের মাকে। কিন্তু আমার ঘৃণা তোমরা পাবে না। আমার ১৭ মাস বয়সী ছোট্ট ছেলেটা একজন সুখী, স্বাধীন মানুষ হয়ে বেড়ে উঠবে, প্রতিদিন সে হাসবে খেলবে আর তোমাদের বুড়ো আঙুল দেখাবে। কারণ, তার ঘৃণাও তোমরা পাবে না।’


এ রকম অসামান্য শক্তি আমাদেরও শক্তি দেয়। এমন আশা আমাদের মনেও আশা জাগায়। এভাবেই আমরা একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াই, একে অপরকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করি।


ক্যাম্পাস ছেড়ে তোমরা বাইরের পৃথিবীতে পা রাখতে যাচ্ছ। আমি তোমাদের বলতে চাই, যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নিজের মধ্যে গড়ে তোলো। শোক কিংবা হতাশা যখন আঘাত করে, নিশ্চিত থেকো, খুব গভীরে সেটা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা তোমার আছে।


দুই বছর আগে কেউ যদি আমাকে বলত, ‘ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েও তুমি জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে’—আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন সত্যিই তাই হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ আমার সন্তানদের জন্য, আমার পরিবারের জন্য, আমার বন্ধু, কাজ আর এই জীবনটার জন্য।


কিছুদিন আগে আমার কাজিন লরার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। স্নাতকেরা, জীবনের ৫০টা বছর যে কী দ্রুত কেটে যায় আর তখন যে নিজেকে কতটা বৃদ্ধ মনে হয়, এই অনুভূতি তোমরা বুঝবে না। তোমাদের মা-বাবা নিশ্চয়ই বোঝেন। লরাকে ফোন করে আমি বলেছিলাম, ‘শুভ জন্মদিন লরা। শুধু এ কথা বলার জন্যই আমি তোমাকে ফোন করিনি। তুমি হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভাবতে বসেছ, “হায়, বয়সটা ৫০ ছুঁয়ে ফেলল!” সে ক্ষেত্রে আমি তোমাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এভাবে ভেব না। মনে রেখ, এ বছর তুমি যেমন ৫০ ছুঁয়েছ, ডেভ বেঁচে থাকলে ওর বয়সও ৫০ হতো। ডেভ পারেনি, তুমি তো পেরেছ।’ বুড়ো হই বা না হই, বয়স কোনো কৌতুকের বিষয় নয়। প্রতিটা বছর, প্রতিটা মুহূর্ত...এমনকি এই যে বাইরে বৃষ্টি পড়ছে...এটাও জীবনের একটা উপহার।


নতুন বছরে আমার প্রতিজ্ঞা ছিল, ঘুমাতে যাওয়ার আগে দিনের তিনটি আনন্দের মুহূর্ত আমি লিখে রাখব। এই সহজ অভ্যাস আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আগে প্রতি রাতে বিছানায় শুয়ে ভাবতাম, কত কী ভুল করলাম, আগামী দিন না জানি কত ভুল করতে যাচ্ছি। এখন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভাবি, আজ কী কী পেলাম। দারুণ সব মুহূর্তের স্মৃতি দিয়ে আমার নোটবুক ভারী হয়ে উঠছে। তোমরাও চেষ্টা করে দেখতে পারো, আজই শুরু করো। আজকের দিনটাতে নিশ্চয়ই লেখার মতো অনেক কিছু তুমি পাবে।


আর হ্যাঁ, আজ রাতে আমার দিনের সেরা তিন মুহূর্তের মধ্যে আমি তোমাদের কথাও লিখব। লিখব, তোমরা আমার মধ্যে আশা আর ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি সঞ্চার করেছ।


অবশেষে আমি যে আমার লম্বা বক্তব্যটা শেষ করতে যাচ্ছি, তোমরাও এই আনন্দের মুহূর্তটার কথা লিখে রাখতে পারো (হাসি)। পুরো পৃথিবী তোমাদের অপেক্ষায় আছে। এই অপার সম্ভাবনাকে তোমরা কীভাবে কাজে লাগাও, দেখার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।


অভিনন্দন আবারও। (সংক্ষেপিত)


ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ


সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

Sunday, April 1, 2018

ইলন মাস্কের সাফল্যের ১০ সূত্র


ইলন মাস্ক

রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। টেসলা, পেপ্যালসহ আরও বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। গত ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্সের তৈরি রকেট ফ্যালকন হেভির সফল উৎক্ষেপণের পর তুমুল আলোচিত হয়েছেন তিনি। পড়ুন তাঁর সাফল্যের সূত্র

১. স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান সমালোচনা


চাকরি বা ব্যবসা—আপনি যা-ই করেন না কেন, নিশ্চয়ই কোনো না কোনো পণ্য তৈরি করছেন। আপনার পণ্যটাকে নিখুঁত করতে হলে মানুষের প্রতিক্রিয়া জানা প্রয়োজন। দুর্বল লোকেরা সমালোচনায় হতাশ হয়ে পড়েন। আর মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা সমালোচনাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে উন্নত করেন। মানুষের প্রতিক্রিয়া তাঁরা মন দিয়ে শোনেন। বোঝার চেষ্টা করেন, এই প্রতিক্রিয়ার কতখানি সত্য। ভাবেন, কোথায় কোথায় নিজেকে আরও উন্নত করা যায়। এই বিশ্বাস থেকেই সমালোচনাকে ভালোবাসেন ইলন মাস্ক। তিনি বলেন, ‘আপনি যা-ই করেন না কেন, একজন সুবিবেচকের সমালোচনা আপনার কাছে স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান।’ বটে, সমালোচকেরাই তো আপনার ভুল ধরিয়ে দেবে!

২. হার মানতে নেই


যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টিভি চ্যানেল সিবিএসের একজন সাংবাদিকের সঙ্গে ইলন মাস্কের কথোপকথনের একটি অংশ শুনুন।

: আপনি যখন পরপর তিনবার ব্যর্থ হলেন, হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা মাথায় আসেনি?

: কখনো না।

: কেন?

: আমি কখনোই হার মানিনি। মৃত্যু এলে কিংবা একেবারে অক্ষম হয়ে গেলে তবেই কেবল আমি হার মানব।

ইলন মাস্কের কথা যে কেবল কথার কথা নয়, তাঁর পেছনের দিনগুলোতে তাকালেই বোঝা যায়। স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন ১ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি।

৩. প্রচারের চেয়ে উন্নয়ন জরুরি


অনেকে প্রতিষ্ঠান প্রচারের জন্য যত টাকা ব্যয় করে, পণ্যের মান উন্নয়নের জন্য ততটা ব্যয় করতে আগ্রহী হয় না। টেসলা সম্পর্কে মাস্কের বক্তব্য, তারা কখনোই বিজ্ঞাপনের জন্য তেমন খরচ করেনি, যতটা পণ্যের উন্নয়নের জন্য করেছে। এই মনোভাব শুধু যে সময়, শক্তি ও অর্থ বাঁচায় তা নয়, দ্রুত সামনে এগোতেও সাহায্য করে। মাস্ক বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান দ্বিধায় পড়ে যায়। তারা এমন সব খাতে টাকা ব্যয় করে, যেগুলো তাদের উৎপাদনকে উন্নত করে না।’ এমন ব্যয় মোটেও কোনো কাজের নয় বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।

৪. জীবন হোক রোমাঞ্চকর


ইলন মনে করেন, জীবনটা খুব ছোট। আপনি যে কাজটা পছন্দ করেন না, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই একই কাজ করার কোনো মানে হয় না। বেরিয়ে পড়ুন, পাহাড়ে চড়ুন, বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান...রোমাঞ্চ উপভোগ করুন। আপনি তো রোবট নন। ইলন বলেন, ‘মঙ্গলে বসতি গড়ার কল্পনা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে। প্রতিদিন কিছু সমস্যা সমাধানের চাইতে জীবনটা অনেক বড়। অতএব, জেগে উঠুন আর ভবিষ্যতের কল্পনায় রোমাঞ্চিত হোন।’

৫. যতটা সম্ভব পরিশ্রম করুন


পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। হোক সেটা মানসিক কিংবা শারীরিক—একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই আপনি সফলতা অর্জন করতে পারেন। পরিশ্রম প্রসঙ্গে ইলন মাস্ক বলেন, ‘কেউ সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছে আর আপনি হয়তো ১০০ ঘণ্টা কাজ করছেন। আপনারা দুজন হয়তো একই কাজ করছেন। নিশ্চিত থাকুন, অন্য মানুষটি যেটা এক বছরে অর্জন করবে, সেটা আপনি মাত্র চার মাসেই অর্জন করতে পারবেন।’ তবে কাজের সঙ্গে শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা থাকাটাও প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন তিনি।

৬. ভালোবাসার ক্ষেত্রটিতেই কাজ করুন


ইলন মাস্ক বলেন, যে কাজটি আপনি করছেন সেটাকে ভালোবাসা খুব জরুরি। যদি তা না হয়, তাহলে মনে হবে, আপনি নিজের ওপর জোর খাটাচ্ছেন। এভাবে হয়তো কিছুদিন চলতে পারবেন। কিন্তু যখন কঠিন সময় আসবে, তখন আর সামলাতে পারবেন না। অতএব, সেই কাজই বেছে নিন, যেটা আপনি সহজাতভাবেই পছন্দ করেন। হোক সেটা গান, গণিত কিংবা মহাকাশবিদ্যা। অনেকেই নিজের ভালো লাগার জায়গাটা ধরতে পারেন না। দ্বিধায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন, লক্ষ করুন, কোন কাজটিতে আপনি সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছেন। নিজেকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন। শিগগিরই পছন্দের জায়গাটা ধরতে পারবেন। ইলন বলেন, ‘যদি আপনি কাজটাকে ভালোবাসেন, তাহলে নিশ্চয়ই কাজের সময় ছাড়াও আপনি এটা নিয়ে ভাববেন। আপনার মস্তিষ্ক এই ভাবনার সঙ্গে অভ্যস্ত। আর যদি পছন্দ না করেন, জোর করে এটা সম্ভব নয়।’

৭. ঝুঁকি নিন


ঝুঁকি নেওয়ার কথা সম্ভবত তাঁর মুখেই সবচেয়ে ভালো মানায়! বারবার ঘুরেছে তাঁর জীবনের মোড়। জিপ টু বিক্রি করে তিনি এক্স ডটকম শুরু করেছেন, পেপ্যালের মতো একটা সফল প্রতিষ্ঠানে নিজের শেয়ারের অংশটা বিক্রি করে দিয়ে তিনি স্পেসএক্সের পেছনে লগ্নি করেছেন। ইলন বলেন, ‘কোনো কিছু করা দরকার মনে হলে প্রতিকূল পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হলেও আপনি সেটা করবেন।’ হ্যাঁ, পুরো ব্যাপারটিই ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। তবে জীবনে কিছু পেতে হলে ঝুঁকি তো নিতেই হবে!

৮. ‘হোমওয়ার্ক’ জরুরি


বিচিত্র সব খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন ইলন মাস্ক। বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের রহস্যটা কী? রহস্য হলো, প্রস্তুতি না নিয়ে তিনি মাঠে নামেন না। তিনি যখন মহাকাশ ও অ্যারোনটিকসের দুনিয়ায় পা রাখলেন, অনেক শিল্পপতি ধরে নিয়েছিলেন, শখের বশেই হয়তো এই খাতে টাকাগুলো খরচ করছেন তিনি। কদিন পর নিশ্চয়ই ব্যর্থ হবেন। ভুল। নিজের লক্ষ্য ঠিক না করে ইলন পা বাড়াননি।

৯. মরিয়া হয়ে লড়াই করুন


আপনার কাছে ১০০ টাকা আছে, আপনি আজকের দিনের খাবার কিনতে পারবেন। কিন্তু তাই বলে আপনার কি বসে থাকাটা উচিত? ইলন মাস্ক সেটা একেবারেই মনে করেন না। অনেক কিছু থাকতেই পারে হাতে, হতে পারে কাজ করার খুব বেশি তাড়া নেই। তবে তাই বলে ধীরে-সুস্থে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন আর মরিয়া হয়ে কাজ করুন। লড়াই করুন নিজের সঙ্গে! নিজের সেরাটা বের করে আনুন।

১০. পড়তে হবে


বিখ্যাত মানুষেরা সব সময়ই পড়ার ওপর জোর দেন। ইলন মাস্কও ব্যতিক্রম নন। ইলনের বয়স যখন নয় বছর, তখন তিনি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পুরোটা পড়ে ফেলেছিলেন! সে সময় বিজ্ঞান কল্পকাহিনি পড়ে গড়ে ১০ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতেন। আজ সেই মানুষটির হাত ধরেই মঙ্গলে বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখছে মানুষ। ভার্জ ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমার ছোট্ট লাইব্রেরিতে মহাকাশ-সম্পর্কিত যত বই আছে, সব আমি পড়েছি।’

গ্রন্থনা: প্রথম আলো - ১৪ এপ্রিল ২০১৮,, সূত্র: এন্ট্রাপ্রেনার ডটকম

Sunday, June 5, 2016

ভেতরের স্বপ্ন, শক্তি, আলো কখনো নেভে না

ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ। প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড অব ডিরেক্টরদের মধ্যে একমাত্র নারী সদস্যও তিনি। ২০১২ সালে টাইম সাময়িকীর করা বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় ছিল তাঁর নাম। গত ১৪ মে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের সমাবর্তনে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
শেরিল স্যান্ডবার্গসমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাধারণত তরুণ আর প্রবীণের একটা চমৎকার সমন্বয় থাকতে হয়। তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব করতে তোমরা তো আছই। প্রবীণের ভূমিকাটা আমার পালন করার কথা। আমি তোমাদের বলব জীবন থেকে আমি কী শিখেছি, তোমরা বাতাসে সমাবর্তনের টুপি ওড়াবে, পরিবারের সঙ্গে হাজারো ছবি তুলবে, ছবিগুলো ইনস্টাগ্রামে আপলোড করবে, হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যাবে—তাই তো?
আজকে না হয় একটু ব্যতিক্রম হোক। হ্যাঁ, টুপি ওড়ানো কিংবা ছবি তোলার ব্যাপারটা একই রকম থাকবে। কিন্তু জীবন থেকে আমি কী শিখেছি, সেটা আজ তোমাদের বলব না। বরং বলব, মৃত্যু আমাকে কী শিখিয়েছে।
কখনো জনসমক্ষে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলিনি। ব্যাপারটা কঠিন। বলার সময় আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করব যেন বার্কলের এই সুন্দর সমাবর্তন গাউনে আমাকে চোখ মুছতে না হয়।
ঠিক ১ বছর ১৩ দিন আগে আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি। ডেভ। ওর মৃত্যুটা ছিল আচমকা, অপ্রত্যাশিত। আমরা মেক্সিকোতে এক বন্ধুর ৫০তম জন্মদিন উদ্যাপন করতে গিয়েছিলাম। ডেভ যখন জিমে ব্যায়াম করতে গেল, আমি তখন একটু চোখ বুজে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এর কিছুক্ষণ পর আমাকে ডেভের নিথর দেহটা জিমের মেঝেতে আবিষ্কার করতে হলো। বাড়ি ফিরে ছেলেমেয়েদের বলতে হলো, তোমাদের বাবা আর নেই।
এরপর কয়েক মাস আমি গভীর বিষাদে ডুবে ছিলাম। আরও স্পষ্ট করে বললে, একটা শূন্যতা আমাকে ঘিরে ধরেছিল। সে শূন্যতা এতই প্রকট যে আমার কোনো কিছু ভাবতে, এমনকি নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হতো। ডেভের মৃত্যু খুব স্পষ্টভাবেই আমাকে বদলে দিল। আমি দুঃখের গভীরতা আর হারানোর ব্যথা বুঝলাম। একই সঙ্গে আমি এ-ও বুঝলাম, জীবন যখন তোমাকে নিচের দিকে টানতে থাকে, সে অবস্থায়ও সব ভেঙেচুরে উঠে আসা যায়, বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া যায়। আমি শিখলাম, শূন্যতাকেও আনন্দময় আর অর্থবহ করে তোলা যায়।
এই আশায় তোমাদের এসব কথা বলছি, যেন এই শিক্ষাটা তোমরা আজই পাও। যেটা আমি মৃত্যু থেকে পেয়েছিলাম। আমাদের ভেতর স্বপ্ন, শক্তি আর আলো—নিবু নিবু করেও কখনো নিভে যায় না।
ছোট ছোট না পাওয়া তোমাদের কাতর করে। তুমি হয়তো ‘এ’ আশা করেছিলে, কিন্তু ‘এ-’ পেয়েছ। তুমি ফেসবুকে ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করেছ, কিন্তু পেয়েছ গুগলে। তুমি কারও প্রেমে পড়েছ, কিন্তু সে তোমাকে ছেড়ে গেছে।
নিশ্চিত থাকো, এর চেয়েও দুঃখের মুহূর্ত তোমার সামনে আসবে। পছন্দসই একটা চাকরি হয়তো তুমি পাবে না। একটা দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতা হয়তো মুহূর্তে তোমার জীবন বদলে দেবে। একটা ভাঙা সম্পর্ক, হয়তো আর কখনো জোড়া লাগবে না।
সহজ দিনগুলো সহজেই পেরিয়ে যাবে। আমি বলছি কঠিন সময়গুলোর কথা। যে সময় তোমার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। কঠিন সময়ই নির্ধারণ করবে, তুমি কে? শুধু তোমার অর্জনই তোমার পরিচয় নয়। বরং তুমি কীভাবে টিকে আছ, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনোবিদ বন্ধু অ্যাডাম গ্র্যান্ট একবার বলছিল, এর চেয়েও খারাপ কী হতে পারত, সেটা ভেবে আমার সান্ত্বনা পাওয়া উচিত। আমি বলেছিলাম, ‘কী বলছ! আমার স্বামী হঠাৎ “কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া”য় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে?’ সে বলল, ‘ধরো এমনও তো হতে পারত, তোমার স্বামীর যখন কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া হলো, তখন সে গাড়ি চালাচ্ছিল। আর পেছনের সিটে বসে ছিল তোমার ছেলেমেয়েরা!’ ওর কথা শোনামাত্র আমার ভেতরটা কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল। তাই তো, জীবন অন্তত আমার কাছ থেকে আমার ছেলেমেয়েদের কেড়ে নেয়নি!
কৃতজ্ঞতাবোধ হলো স্থিরতার চাবি। জীবনের আশীর্বাদগুলোর মূল্যায়ন করলেই এমন আশীর্বাদ তুমি আরও পাবে। এ বছরের শুরুতে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দিনের সেরা তিনটা মুহূর্ত লিখে রাখব। এই ছোট্ট একটা অভ্যাস আমার জীবন বদলে দিয়েছে। কারণ প্রতিদিন যা-ই ঘটুক না কেন, আমি আনন্দময় কিছু ভাবতে ভাবতে ঘুমাতে যাই। অন্তত চেষ্টা করি। আজ থেকেই তুমিও শুরু করতে পারো।

Saturday, November 7, 2015

নিজের মতো হও : অপরাহ উইনফ্রে

Untitled-5অপরাহ উইনফ্রে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও ধনী উপস্থাপক। তাঁর বিশ্বজোড়া খ্যাতি স্বপরিচালিত ‘দি অপরাহ উইনফ্রে শো’র জন্য। ১৯৮৬ সালে শুরু হওয়া এই শো শেষ হয় ২০১১-তে। যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপিতে ১৯৫৪ সালের ২৯ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। ২০১৩ সালের ৩০ মে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি এই বক্তব্য দেন।ভাবতেই দারুণ লাগছে যে আমি এখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তোমাদের জীবনে আজকের এই দিনটা একটা বিশেষ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি আর নতুন অধ্যায় শুরুর সময়। আমি খুবই কৃতজ্ঞ হার্ভার্ড থেকে সম্মানজনক ডক্টরেট অর্জন করতে পেরে।আমার টেলিভিশনের ক্যারিয়ার বেশ অপ্রত্যাশিতভাবেই শুরু হয়েছিল। আমি মিস ফায়ার প্রিভেনশন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল ১৬ বছর। সেখানে প্রশ্ন-উত্তরের একটা পর্ব ছিল। আমাকে প্রশ্ন করা হলো যে আমি বড় হয়ে কী হতে চাই? ঝটপট উত্তর দিয়ে দিলাম, আমি একজন সাংবাদিক হতে চাই। আমি এমনভাবে মানুষের গল্পগুলোকে অন্যদের কাছে তুলে ধরতে চাই, যাতে তাদের জীবনে তা কিছুটা হলেও ভিন্নতা নিয়ে আসে। উত্তরটা দিয়ে আমি নিজেই বেশ অবাক হলাম। বাহ্! দারুণ তো! আমি সাংবাদিক হতে চাই, আমি পরিবর্তন চাই।আমি যখন টেলিভিশনে কাজ করা শুরু করি, তখন আমার বয়স ১৯ বছর। ১৯৮৬ সালে আমি আমার নিজের টেলিভিশন শো শুরু করি এবং আমার বিশ্বাস ছিল যে আমি সফল হব। প্রথম দিকে আমি প্রতিযোগিতার কথা ভেবে কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমি নিজেই নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করি। যতটা সম্ভব কঠোর পরিশ্রম করি। তাই একসময় শীর্ষে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। অপরাহ উইনফ্রে শো ২১ বছর ধরে এক নম্বর অবস্থানে ছিল। এর সাফল্যে আমি খুবই খুশি ছিলাম। কিন্তু বছর খানেক আগে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে এবার নতুন করে কিছু শুরু করতে হবে। তাই আমি এই শো শেষ করে দিয়ে শুরু করলাম অপরাহ উইনফ্রে নেটওয়ার্ক, সংক্ষেপে ওউন। এর বছর খানেক পরে প্রায় সব গণমাধ্যমেই বলা হলো যে আমার এই উদ্যোগ ফ্লপ হয়েছে। কেবল ফ্লপ বললে ভুল হবে, মস্ত বড় রকমের ফ্লপ। সে সময়টাতে একদিন মি. ফস্ট আমাকে বললেন, হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে কিছু বলার জন্য। কিন্তু আমি ভাবছিলাম যে আমি তাদের উদ্দেশে কী বলব, যারা পৃথিবীর সবচেয়ে সফল গ্র্যাজুয়েট। আমার তো সফলতার মাত্রা কমতে শুরু করেছে। অনেকক্ষণ ধরে ভাবতে লাগলাম। হঠাৎ পুরোনো দিনের একটা তত্ত্বকথা মনে পড়ল, ‘দুঃখ-কষ্ট সব সময় থাকে না, একসময় চলে যায়।’ আমার মনে হলো, হ্যাঁ, আমি অবশ্যই হার্ভার্ডে যাব এবং আমি আমার বিশ্বাসের কথা বলব।কতটা উঁচুতে তুমি উঠতে যাচ্ছ বা উঠতে পারবে, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই কোনো গুরুত্ব থাকে না। জীবনের কোনো না কোনো সময় তোমাকে হোঁচট খেতে হবে। তুমি যদি সারাক্ষণ নিজেকে ঠেলতে থাকো ওপরে তোলার জন্য, তুমি কোনো একটা সময় নিচে পড়ে যাবে। তবে যখনই এ রকম একটা অবস্থার মুখোমুখি হবে তখন মনে রেখো, ব্যর্থতার মতো আর কিছু নেই। জীবন যখন আমাদের অন্য দিকে চালানোর চেষ্টা করে, সেটাই ব্যর্থতা। আমরা যখন গর্তে পড়ে যাই, তখন সেটা আমাদের কাছে ব্যর্থতার মতো মনে হয়। তাই গত বছর আমি নিজেই নিজেকে বোঝাতে লাগলাম। গর্তে পড়ে যাওয়ার সময়টাতে সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগে। কিছুটা সময় দাও তখন নিজেকে চিন্তা করার জন্য যে তুমি কী হারিয়েছ? তবে অবশ্যই এর সমাধান আছে। তোমার ভুলগুলো থেকে শেখার চেষ্টা করো। কারণ, প্রতিটি অভিজ্ঞতাই তোমাকে শেখাবে এবং তোমার নিজের শক্তি সম্পর্কে, তুমি উপলব্ধি করতে পারবে। পরবর্তী সঠিক পদক্ষেপটি কী হতে পারে, সেটা তোমাকেই খুঁজে বের করতে হবে। নিজের ভেতরকার মূল মন্ত্র ও অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে হবে। তখন সেটাই বলে দেবে যে কোন পথে তোমাকে যেতে হবে।
একটা ব্যাপার কি চিন্তা করেছ, এখন থেকে সব সময় যখনই তুমি তোমাকে গুগল করবে, তখন এর ফলাফলের মধ্যে থাকবে ‘হার্ভার্ড ২০১৩’। এখনকার সময়ের এই প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে এটা একধরনের কলিং কার্ড। এই দারুণ কলিং কার্ডটি ভবিষ্যতে তোমাদের জন্য চমৎকার বুলেট হিসেবে কাজ করবে, তা তোমরা আইনজীবী, সিনেটর, সিইও, বিজ্ঞানী, পদার্থবিদ, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অথবা টক শোর উপস্থাপক যা-ই হও না কেন।
আমার মনে হয় যে জীবনের একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এমন একটা জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করা, যেখানে তুমি কী হতে চাও, তাও বলবে। তুমি কী অর্জন করেছ, সেটা নয়, বরং তুমি কীভাবে অর্জন করেছ, তোমার জীবনের উদ্দেশ্য—এ সবকিছুর কথা বলবে। কেবল গৎবাঁধা একটা শিরোনাম ও কিছু কথা দিয়ে হবে না।
যখন তুমি পা পিছলে অন্ধকার গর্তে পড়ে যাবে, সে গল্পটাই তোমাকে সে অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসবে।
১৯৯৪ সালে আমি একজন ছোট্ট মেয়ের ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম। সে মেয়েটি অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে নিজে নিজেই হাজার ডলার পর্যন্ত জোগাড় করেছে। তখন আমার মনে হলো, যদি এই নয় বছরের মেয়েটি একটা ঝুড়ি ও বিশাল হূদয় নিয়ে এমন কাজ করতে পারে, তবে আমি কেন পারব না? তখন আমি দর্শকদের অনুরোধ করলাম, তাদের সাধ্যমতো সাহায্য করতে। ক্ষুদ্র্র ক্ষুদ্র সংগ্রহ একসময় তিন মিলিয়ন ডলার ছড়িয়ে গেল। এই টাকা থেকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি স্টেটের একজন করে শিক্ষার্থীকে সাহায্য করতে শুরু করলাম।
এখন যে ধারণাটা আমার কাছে বেশ স্বচ্ছ, আগে কিন্তু এমনটা ছিল না। আমি আগেও বলেছি যে আমি ১৯ বছর বয়স থেকে টিভির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ’৯৪ সালের দিকে আমি বুঝতে শুরু করলাম। তাই এমনটা ভাবা ঠিক না যে সবাই একসঙ্গে একই সময়ে সবকিছু বুঝতে পারবে। আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি টেলিভিশন দিয়ে ব্যবহার হওয়ার জন্য না, বরং টেলিভিশনকে ব্যবহার করার জন্য এসেছি। এই শক্তিশালী মাধ্যমকে ব্যবহার করতে হবে আমাদের মানবীয় শক্তিগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
তোমাদের প্রত্যেকের ভেতরকার আলো তখনই চারদিক আলোকিত করবে যখন তোমরা চাইবে। মিসিসিপি গ্রামের এক ছোট্ট মেয়ে হিসেবে আমি তখনই বুঝেছিলাম, নিজের মতো হওয়া অনেক সহজ বারবারা ওয়ালটন হওয়ার চেয়ে।
জীবনে চলার পথে কখনো হতাশা আসতে পারে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সমস্যা দেখা দিতে পারে, নানা রকম প্রশ্নও আসতে পারে। কিন্তু তোমার মধ্যেই সেই সম্ভাবনা আছে, যা দিয়ে সব রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি তুমি দাঁড়াতে পারবে। সেই সত্যকে যদি উপলব্ধি করতে পারো, তখন তুমি নিজেই বুঝতে পারবে যে কোন কাজটা তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে, তোমাকে সুখী করবে। আর এর মাধ্যমেই পৃথিবীতে তুমি তোমার পদচিহ্ন রাখতে পারবে। অভিনন্দন ২০১৩ সালের গ্র্যাজুয়েটদের।

সূত্র: ওয়েবসাইট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: মারুফা ইসহাক

Tuesday, January 24, 2012

মাহমুদ আহমেদিনেজাদের জীবনযাত্রা




মাহমুদ আহমেদিনেজাদ। ইরানের প্রেসিডেন্ট। আধুনিক বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাশীল প্রেসিড...েন্টদের একজন। তার বাবা একজন সামান্য কামার। সৎ,সাহসী,পরিশ্রমী,দূরদর্শী নেতা হিসেবে সারা বিশ্বেই আহমেদিনেজাদ আজ সমাদৃত। পেশায় তিনি ছিলেন একজন পি এইচ ডি ধারী তুখোড় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তেহরান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির অধ্যাপক, ছিলেন তেহরানের মেয়র। ১৯৭৯ সালে ইরানের যে হাজার হাজার ছাত্র আমেরিকান দূতাবাস আক্রমণ করে ৫৩ জন কূটনীতিক কে বন্দী করে আহমেদিনেজাদ ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। তার জীবনযাপন ও চলাফেরার মধ্যে আমরা খুঁজে পাই আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশিত পথের স্পষ্ট ছাপ। একটি উন্নত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি যে সৎ জীবন যাপন করেন সেটা থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা অনেক কিছু শিখতে পারে। তার সেই বিচিত্র জীবনের কিছু চিত্র নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করব.........।।

(১) জ্ঞান,বিজ্ঞান,শিক্ষা,প্রযুক্তি,শিল্প-সংস্কৃতি,গবেষণা,অর্থনীতি সব দিক থেকে ইরান আজ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তালিকায় নিজের স্থান করে নিয়েছে। দেশের উন্নয়নে তার দূরদর্শী চিন্তাভাবনা ইরানকে আজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে।

(২) অথচ আপনি ভাবলে অবাক হবেন ,এই ক্ষমতাশালী লোকটি একসময় তেহরানের মেয়র থাকাকালে নিজ হাতে রাস্তায় ঝাড়ু দিতেন।

(৩)আপনি ভাবলে অবাক হবেন, এই লোকটি আজো দুই রুমের একটা ছোট্ট বাড়িতে থাকেন।তার বাসায় দুই একটা কাঠের চেয়ার ছাড়া আরা কোন আসবাবপত্র নেই।

(৪) আপনি ভাবলে অবাক হবেন, এই লোকটি আজো ঘরের ফ্লোরে একটা পুরনো কার্পেটের উপর বালিশ বিছিয়ে তারপর ঘুমান। তার বাসায় কোন শোয়ার খাট নেই।

(৫)আপনি ভাবলে অবাক হবেন, এই লোকটি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তার ছেলে মাহাদির বিয়েতে মাত্র ৪৫ জন অতিথিকে(২৫ জন নারী এবং ২০ জন পুরুষ)নিমন্ত্রন করেন। তাকে যখন NBC নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক এর কারন জিজ্ঞাসা করেন তখন তিনি অত্যন্ত হাসিমুখে বিনয়ের সাথে বলেন, এর চাইতে বেশি মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। ভাবুন, পৃথিবীর একটা উন্নত দেশের প্রেসিডেন্ট বলছে এই কথা। তাও সেই বিয়েতে কোন ভোজের ব্যাবস্থা ছিলনা। প্রত্যেক অতিথি কে একটি কমলা,একটি কলা,একটি আপেল আর ছোট্ট এক টুকরো কেক দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল।

(৬) আপনি ভাবলে অবাক হবেন, এই লোকটি সবার আগে সকাল ৭ টায় অফিসে যান।

(৭) আপনি ভাবলে অবাক হবেন, এই লোকটি আজো সকালে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নিজের স্ত্রীর হাতের বানানো সকালের ব্রেকফাস্ট এবং দুপুরের খাবার একটা ছোট্ট কালো ব্যাগে করে সাথে নিয়ে যান। অফিসের কার্পেটের ফ্লোরে বসে তৃপ্তির সাথে সবার সামনে তিনি তার খাবার খান।

(৮) দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় তিনি বাসার দারোয়ান, পথচারী ও সাধারন মানুষের সাথে কথা বলে তাদের সুখ দুঃখ শেয়ার করেন।

(৯)তিনি যখনি কোন মন্ত্রীকে তার অফিসে ডাকেন তাকে একটা মন্ত্রণালয় চালানোর একটা দিকনির্দেশনা দিয়ে দেন। পাশাপাশি তিনি তাদের বলে দেন,রাস্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের ব্যাক্তিগত হিসাব নিকাশ ও তাদের নিকট আত্নীয় স্বজনের কার্যকলাপ কঠিনভাবে মনিটর করা হচ্ছে।

(১০)ভাবতে অবাক লাগে তার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি বলতে তেহরানের বস্তিতে অবস্থিত ছোট্ট একটি বাড়ি,যা ৪০ বছর আগে তিনি তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। বাড়িটির নাম Peugeot 504. আপনি শুনলে অবাক হবেন তার ব্যাংক একাউন্টে বেতনের জমানো কিছু টাকা ছাড়া আর কিছু নেই। তেহরান ইউনিভার্সিটি তে তার বেতন মাত্র ২৫০ ইউ এস ডলার।

(11) আপনি শুনলে অবাক হবেন, তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্র থেকে কোন টাকা নেন না। তিনি ইউনিভার্সিটি থেকে প্রাপ্ত বেতনের টাকা দিয়ে চলেন।BBC সাংবাদিক তাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “সব সম্পত্তি হল রাষ্ট্রের আর তার কাজ হল সেগুলো পাহারা দেওয়া”।

(১২)আপনি শুনলে অবাক হবেন, এই লোকটি এত বেশি পরিশ্রম করেন যে,তিনি সারাদিন ৩ ঘণ্টার বেশি ঘুমানোর সময় পান না। তিনি প্রতিদিন সকাল ৫ টায় ফযরের নামায পড়ে কাজ শুরু করেন আর রাত ২ টায় ব্যাক্তিগত স্টাডি ও এশার নামায পড়ে ঘুমাতে যান।

(১৩)আপনি শুনলে অবাক হবেন, এই লোকটি কখনও নামায বাদ দেন না। নামাযের সময় হলে রাস্তায় ছোট্ট কাপড় বিছিয়ে নামায আদায় করেন। রাষ্ট্রীয় সব বড় বড় নামাযের জামাতে তিনি সব সময় পিছনের সারিতে সাধারন মানুষের সাথে বসতে ভালবাসেন।


সংগৃহীত