৯৯৮ সালে ফিফা বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্সের তারকা ফুটবলার জিনেদিন জিদান ফ্রান্সের মার্সেইতে ১৯৭২ সালের ২৩ জুন জন্মগ্রহণ করেন৷ জিদান ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার সম্মাননা লাভ করেছেন তিনবার, একবার ব্যালন ডি’অর৷ ২০০৬ সালে ফিফা বিশ্বকাপে তাঁর অনবদ্য নৈপুণ্যে ফ্রান্স ফাইনালে ওঠে, জিদান লাভ করেন গোল্ডেন বল।
আমার বাবার কাছ থেকেই আমি সবকিছু শিখেছি। তাঁর কাছ থেকে শেখা সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, অন্যকে সম্মান দেওয়া। আমার বাবা আলজেরিয়া থেকে ফ্রান্সে আসেন, যা ছিল তাঁর জন্য দুঃস্বপ্ন। নতুন জায়গায় কাজের সন্ধান ও ফ্রান্সের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছিল তাঁর জন্য বেশ কঠিন৷ নিজেকে প্রমাণ করার জন্য বাবাকে সব সময় সংগ্রামের মধ্যে থাকতে হতো। বাবা সেই কষ্টের গল্প থেকে আমাকে অনন্য একটা কথা শিখিয়েছিলেন। অন্যদের সম্মান অর্জনের জন্য আপনাকে সব সময় দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে। সম্মান আদায় করতে চাইলে অন্যদের সম্মান দিতে হবে। আমার বাবার এই শিক্ষা আমি আমার সন্তানদের দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
ছোটবেলায় আমার মনে হতো, আমি নিয়ম-শৃঙ্খলার জালে বন্দী। আমার শৈশব ছিল বেশ কঠিন, সবকিছু নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ। কিন্তু এখন টের পাই, সেই কঠিন শৈশবের কারণেই আমি এখন জীবনের বড় বড় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারি খুব সহজে। বাবা আমার জন্য ছিলেন বাতিঘর। সেই বাতির আলো থেকে পাওয়া শিক্ষা আমার পুরো ক্যারিয়ারে প্রয়োগের আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।
যেকোনো পরিবারের জন্য বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি বড় ধরনের একটা সুবিধাও বটে। যেসব শিশুর বাবা-মা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলেন, সে শিশুরা ব্যতিক্রম হয়। তারা অন্যদের চেয়ে বেশি উদার হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ছোঁয়ায় তারা অনন্য হয়। আমার সন্তানদের দিকে তাকালে এটা সবাই বুঝতে পারবে।
আমি ছোটবেলায় রাস্তায় ফুটবল খেলতাম; যেখানে আমি খেলতাম সেরাদের সেরার মতো, আমার নিজের মতো। বল নিয়ে সেই দুরন্ত কৈশোর ছিল আমার জন্য স্মরণীয় এক সময়। তখনো আমি জানতাম না, ফুটবল খেলা খুবই মজার একটি কাজ।
জীবনে লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র চাবি হলো সাহস। নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য সাহসী হওয়ার বিকল্প নেই৷ সাহসীরা ব্যর্থ হয় না। কোনো কাজে ব্যর্থ হলে নতুন করে পথ খুঁজে নেয়। মানুষের জীবন অনেকটা বরফে চলা স্লেজ গাড়ির মতো—সব সময় দৌড়ের ওপর থাকে। কখনো কখনো পথ চলতে মনে হবে, আরে, কষ্ট ছাড়াই তো পর্বতের ঢাল বেয়ে নেমে সামনে যাওয়া যায়! কিন্তু সামনে যখন পর্বতের খাড়া অংশ হাজির হবে, তখন সেটা পার হতে আপনার সাহসই হবে আপনার একমাত্র সহায়, একমাত্র উপায়। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তার সাহস।
আমার আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে ১৪টি লাল কার্ডের দেখা পাই, যার মধ্যে ১২টির একমাত্র কারণ ছিল রাগ। আমাকে যখন অন্যরা কথার মাধ্যমে রাগিয়ে তুলতে পেরেছে, তখনই আমি লাল কার্ডের দেখা পাই। এটা নিঃসন্দেহে গর্বের কোনো কারণ নয়। আমি আমার পক্ষে সাফাই গাচ্ছি না। আমার অন্যায় সহ্য করার ক্ষমতা কম, তাই আমি রেগে গিয়ে লাল কার্ড দেখার কাজ করতাম। যদিও আমি মাঠের বাইরের উল্টো। সাধারণ জীবনে আমি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকার চেষ্টা করি। আমি কাউকে কখনোই রাগানোর চেষ্টা করি না। কখনোই কারও সঙ্গে প্রতারণা করি না। সারা জীবন এই সাধনা করে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
আমি যখন নিজে বাবা হই, সেটা ছিল অন্য রকম অভিজ্ঞতা। আমি বড় আঙ্গিকে জীবনকে দেখার সুযোগ পাই। বাবা হওয়া মানেই সন্তানকে পড়াশোনা করার দায়িত্ব নয়। আপনি যা জানেন, জীবন সম্পর্কে যে ধারণা পেয়েছেন, তা আপনার সন্তানকে জানানো আপনার কর্তব্য। আমার জন্য ফুটবল খেলার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানদের সময় দেওয়া ছিল বেশ কষ্টকর। কোনোটাই আপনি ছাড়তে পারবেন না। কি ফুটবল, কি সন্তান—দুটোই যে জীবন।
জীবনকে উপভোগ করতে চাইলে আপনার অতীতের বেশ কিছু ঘটনা ভুলে যেতে হবে। সেই ঘটনাগুলোয় আপনি হয়তো ছিলেন অন্যদের মতন; নিজেকে নিয়েই ছিল আপনার সব ব্যস্ততা আর সব ধান্দা। আপনার সব শক্তি অন্য সব সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয় করার মহান দীক্ষা নিতে হবে। সেই দীক্ষা পুরোপুরি আয়ত্ত করতে না পারলেও চেষ্টা করতে দোষ কী? সেই চেষ্টাটা সব সময়ই জাদুর মতোই অবিশ্বাস্য হয়। যতক্ষণ নিজেকে মানুষের ভালো করার জন্য বদলাতে পারবেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই চেষ্টা মনে হবে অলৌকিক কোনো গল্প।
সূত্র: ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের এস্কোয়ার ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন জাহিদ হোসাইন খান
আমার বাবার কাছ থেকেই আমি সবকিছু শিখেছি। তাঁর কাছ থেকে শেখা সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, অন্যকে সম্মান দেওয়া। আমার বাবা আলজেরিয়া থেকে ফ্রান্সে আসেন, যা ছিল তাঁর জন্য দুঃস্বপ্ন। নতুন জায়গায় কাজের সন্ধান ও ফ্রান্সের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছিল তাঁর জন্য বেশ কঠিন৷ নিজেকে প্রমাণ করার জন্য বাবাকে সব সময় সংগ্রামের মধ্যে থাকতে হতো। বাবা সেই কষ্টের গল্প থেকে আমাকে অনন্য একটা কথা শিখিয়েছিলেন। অন্যদের সম্মান অর্জনের জন্য আপনাকে সব সময় দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে। সম্মান আদায় করতে চাইলে অন্যদের সম্মান দিতে হবে। আমার বাবার এই শিক্ষা আমি আমার সন্তানদের দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
ছোটবেলায় আমার মনে হতো, আমি নিয়ম-শৃঙ্খলার জালে বন্দী। আমার শৈশব ছিল বেশ কঠিন, সবকিছু নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ। কিন্তু এখন টের পাই, সেই কঠিন শৈশবের কারণেই আমি এখন জীবনের বড় বড় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারি খুব সহজে। বাবা আমার জন্য ছিলেন বাতিঘর। সেই বাতির আলো থেকে পাওয়া শিক্ষা আমার পুরো ক্যারিয়ারে প্রয়োগের আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।
যেকোনো পরিবারের জন্য বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি বড় ধরনের একটা সুবিধাও বটে। যেসব শিশুর বাবা-মা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলেন, সে শিশুরা ব্যতিক্রম হয়। তারা অন্যদের চেয়ে বেশি উদার হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ছোঁয়ায় তারা অনন্য হয়। আমার সন্তানদের দিকে তাকালে এটা সবাই বুঝতে পারবে।
আমি ছোটবেলায় রাস্তায় ফুটবল খেলতাম; যেখানে আমি খেলতাম সেরাদের সেরার মতো, আমার নিজের মতো। বল নিয়ে সেই দুরন্ত কৈশোর ছিল আমার জন্য স্মরণীয় এক সময়। তখনো আমি জানতাম না, ফুটবল খেলা খুবই মজার একটি কাজ।
জীবনে লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র চাবি হলো সাহস। নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য সাহসী হওয়ার বিকল্প নেই৷ সাহসীরা ব্যর্থ হয় না। কোনো কাজে ব্যর্থ হলে নতুন করে পথ খুঁজে নেয়। মানুষের জীবন অনেকটা বরফে চলা স্লেজ গাড়ির মতো—সব সময় দৌড়ের ওপর থাকে। কখনো কখনো পথ চলতে মনে হবে, আরে, কষ্ট ছাড়াই তো পর্বতের ঢাল বেয়ে নেমে সামনে যাওয়া যায়! কিন্তু সামনে যখন পর্বতের খাড়া অংশ হাজির হবে, তখন সেটা পার হতে আপনার সাহসই হবে আপনার একমাত্র সহায়, একমাত্র উপায়। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তার সাহস।
আমার আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে ১৪টি লাল কার্ডের দেখা পাই, যার মধ্যে ১২টির একমাত্র কারণ ছিল রাগ। আমাকে যখন অন্যরা কথার মাধ্যমে রাগিয়ে তুলতে পেরেছে, তখনই আমি লাল কার্ডের দেখা পাই। এটা নিঃসন্দেহে গর্বের কোনো কারণ নয়। আমি আমার পক্ষে সাফাই গাচ্ছি না। আমার অন্যায় সহ্য করার ক্ষমতা কম, তাই আমি রেগে গিয়ে লাল কার্ড দেখার কাজ করতাম। যদিও আমি মাঠের বাইরের উল্টো। সাধারণ জীবনে আমি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকার চেষ্টা করি। আমি কাউকে কখনোই রাগানোর চেষ্টা করি না। কখনোই কারও সঙ্গে প্রতারণা করি না। সারা জীবন এই সাধনা করে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
আমি যখন নিজে বাবা হই, সেটা ছিল অন্য রকম অভিজ্ঞতা। আমি বড় আঙ্গিকে জীবনকে দেখার সুযোগ পাই। বাবা হওয়া মানেই সন্তানকে পড়াশোনা করার দায়িত্ব নয়। আপনি যা জানেন, জীবন সম্পর্কে যে ধারণা পেয়েছেন, তা আপনার সন্তানকে জানানো আপনার কর্তব্য। আমার জন্য ফুটবল খেলার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানদের সময় দেওয়া ছিল বেশ কষ্টকর। কোনোটাই আপনি ছাড়তে পারবেন না। কি ফুটবল, কি সন্তান—দুটোই যে জীবন।
জীবনকে উপভোগ করতে চাইলে আপনার অতীতের বেশ কিছু ঘটনা ভুলে যেতে হবে। সেই ঘটনাগুলোয় আপনি হয়তো ছিলেন অন্যদের মতন; নিজেকে নিয়েই ছিল আপনার সব ব্যস্ততা আর সব ধান্দা। আপনার সব শক্তি অন্য সব সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয় করার মহান দীক্ষা নিতে হবে। সেই দীক্ষা পুরোপুরি আয়ত্ত করতে না পারলেও চেষ্টা করতে দোষ কী? সেই চেষ্টাটা সব সময়ই জাদুর মতোই অবিশ্বাস্য হয়। যতক্ষণ নিজেকে মানুষের ভালো করার জন্য বদলাতে পারবেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই চেষ্টা মনে হবে অলৌকিক কোনো গল্প।
সূত্র: ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের এস্কোয়ার ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন জাহিদ হোসাইন খান
No comments:
Post a Comment