Wednesday, April 4, 2018

শেরিল স্যান্ডবার্গ,ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা



ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ। টাইম সাময়িকীর করা বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় আছে তাঁর নাম। গত ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির (ভার্জিনিয়া টেক) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি



দুই বছর এগারো দিন আগে আমি আমার স্বামী ডেভকে হারিয়েছি। আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিতভাবে। ওর কথা বলতে গেলে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়। কারণ, আমি এখনো ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারি না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময়ও ভেবেছিলাম, দিনটা আর দশটা দিনের মতোই কাটবে। অথচ ওই এক দিনেই আমার জীবনটা বদলে গিয়েছিল।


আমি জানি, আজ তোমাদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। বাইরে সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে। আর আমি কি না এখানে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর কথা বলছি। এর পেছনে একটা কারণ আছে। কথা দিচ্ছি, আমি তোমাদের মন খারাপ করিয়ে দেব না।


ডেভের মৃত্যুর পর পৃথিবীর প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। সে কথাই আজ তোমাদের বলব। কারণ, আমার বিশ্বাস, আমার অভিজ্ঞতা তোমাদের একটা সুস্থ-সুন্দর জীবনের দিকনির্দেশনা দেবে। আজ এখানে পৌঁছানোর পেছনে তোমাদের প্রত্যেকের নিশ্চয়ই বিচিত্র সব গল্প আছে। কেউ কেউ প্রচণ্ড মানসিক চাপের মুখোমুখি হয়েছ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা তোমাদের হয়েছে। হতাশা, মানসিক যন্ত্রণা, হারানোর ব্যথা, অসুস্থতা—এ সব অনুভূতি খুব ব্যক্তিগত, কিন্তু সর্বজনীন। কিছু কিছু ব্যথা আবার একার নয়। ভার্জিনিয়া টেকের শিক্ষার্থীরা খুব ভালো করে সেটা জানে। আজ সকালে ড্রিলফিল্ডের ‘থার্টি টু হকি স্টোন’-এর সামনে দিয়ে আসার সময় আমি যেমন মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিলাম, তোমরাও নিশ্চয়ই তা-ই করো। (২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ভার্জিনিয়া টেকের ৩২ জন শিক্ষার্থী। তাঁদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২টি স্মৃতিস্তম্ভ আছে—বি.স.) তোমরা জানো, এক মুহূর্তের মধ্যে জীবনটা বদলে যেতে পারে। তোমরা জানো, এই সময়ে সবার একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হয়, শোক অনুভব করতে হয়, নিজেদের টেনে তুলতে হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা, একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।


আমাদের সবারই একটা দল প্রয়োজন। বিশেষ করে তখন, যখন জীবন আমাদের সামনে বাধার দেয়াল তুলে দেয়। ভার্জিনিয়া টেকের বাইরেও তোমরা একেকটা দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই দলটাই সাহায্যের প্রয়োজন হলে এগিয়ে আসবে। আমার জন্য অবশ্য একটা দলের অংশ হওয়া খুব কঠিন ছিল। ডেভের মৃত্যুর আগে আমি আসলে মানুষকে বিরক্ত করতে চাইতাম না। হ্যাঁ, আমার কাছে ব্যাপারটা ‘বিরক্ত করা’ই মনে হতো। কিন্তু ডেভ চলে যাওয়ার পর সব বদলে গেল। কখনো ভাবিনি পরিবার, বন্ধু আর সহকর্মীরা আমার জীবনে এতটা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে।


তোমাদের মধ্যে কেউ কি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছ? ভাবছ ভাগ্য তোমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? মাঝেমধ্যে আমারও এমন ভয় হয়। এই ভয়ের বিরুদ্ধে তুমি কী নিয়ে লড়বে জানো? আশা—ছোট্ট একটা শব্দে লুকিয়ে আছে অনেক বড় ভাবার্থ।


আমরা ভাবি ‘আশা’ প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সম্পদ। কিন্তু ‘ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতার’ পাশাপাশি আশাও কিন্তু দলগতভাবে গড়ে উঠতে পারে। দুই দিন আগে আমি চার্লসটনের মাদার ইমানুয়েল চার্চে গিয়েছিলাম। আমরা সবাই জানি দুই বছর আগে সেখানে গোলাগুলিতে একজন যাজক এবং আটজন ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এরপর যা ঘটেছে তা সত্যিই অনন্য। ঘৃণার বদলে সেখানকার সব মানুষ ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা একসঙ্গে বর্ণবাদ ও হিংস্রতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় যাজক জারমেইন ওয়াটকিনস যেমন খুব সুন্দর করে বলেন, ‘ঘৃণাকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়। বিভেদকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়। আশাহীনতাকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়।’


ফেসবুকে আমি অনেকের লেখাই পড়ি। কিন্তু প্যারিসের সাংবাদিক অ্যান্টয়েন লেইরিসের একটা লেখা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। তাঁর স্ত্রী হেলেন ২০১৫ সালে প্যারিস হামলায় নিহত হয়েছিলেন। এর মাত্র দুই দিন পর লেইরিস তাঁর স্ত্রীর হত্যাকারীদের উদ্দেশে একটা খোলা চিঠি লিখেছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘শুক্রবার রাতে তোমরা কেড়ে নিয়েছ একজন অন্য রকম মানুষকে, আমার ভালোবাসাকে, আমার সন্তানের মাকে। কিন্তু আমার ঘৃণা তোমরা পাবে না। আমার ১৭ মাস বয়সী ছোট্ট ছেলেটা একজন সুখী, স্বাধীন মানুষ হয়ে বেড়ে উঠবে, প্রতিদিন সে হাসবে খেলবে আর তোমাদের বুড়ো আঙুল দেখাবে। কারণ, তার ঘৃণাও তোমরা পাবে না।’


এ রকম অসামান্য শক্তি আমাদেরও শক্তি দেয়। এমন আশা আমাদের মনেও আশা জাগায়। এভাবেই আমরা একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াই, একে অপরকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করি।


ক্যাম্পাস ছেড়ে তোমরা বাইরের পৃথিবীতে পা রাখতে যাচ্ছ। আমি তোমাদের বলতে চাই, যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নিজের মধ্যে গড়ে তোলো। শোক কিংবা হতাশা যখন আঘাত করে, নিশ্চিত থেকো, খুব গভীরে সেটা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা তোমার আছে।


দুই বছর আগে কেউ যদি আমাকে বলত, ‘ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েও তুমি জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে’—আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন সত্যিই তাই হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ আমার সন্তানদের জন্য, আমার পরিবারের জন্য, আমার বন্ধু, কাজ আর এই জীবনটার জন্য।


কিছুদিন আগে আমার কাজিন লরার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। স্নাতকেরা, জীবনের ৫০টা বছর যে কী দ্রুত কেটে যায় আর তখন যে নিজেকে কতটা বৃদ্ধ মনে হয়, এই অনুভূতি তোমরা বুঝবে না। তোমাদের মা-বাবা নিশ্চয়ই বোঝেন। লরাকে ফোন করে আমি বলেছিলাম, ‘শুভ জন্মদিন লরা। শুধু এ কথা বলার জন্যই আমি তোমাকে ফোন করিনি। তুমি হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভাবতে বসেছ, “হায়, বয়সটা ৫০ ছুঁয়ে ফেলল!” সে ক্ষেত্রে আমি তোমাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এভাবে ভেব না। মনে রেখ, এ বছর তুমি যেমন ৫০ ছুঁয়েছ, ডেভ বেঁচে থাকলে ওর বয়সও ৫০ হতো। ডেভ পারেনি, তুমি তো পেরেছ।’ বুড়ো হই বা না হই, বয়স কোনো কৌতুকের বিষয় নয়। প্রতিটা বছর, প্রতিটা মুহূর্ত...এমনকি এই যে বাইরে বৃষ্টি পড়ছে...এটাও জীবনের একটা উপহার।


নতুন বছরে আমার প্রতিজ্ঞা ছিল, ঘুমাতে যাওয়ার আগে দিনের তিনটি আনন্দের মুহূর্ত আমি লিখে রাখব। এই সহজ অভ্যাস আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আগে প্রতি রাতে বিছানায় শুয়ে ভাবতাম, কত কী ভুল করলাম, আগামী দিন না জানি কত ভুল করতে যাচ্ছি। এখন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভাবি, আজ কী কী পেলাম। দারুণ সব মুহূর্তের স্মৃতি দিয়ে আমার নোটবুক ভারী হয়ে উঠছে। তোমরাও চেষ্টা করে দেখতে পারো, আজই শুরু করো। আজকের দিনটাতে নিশ্চয়ই লেখার মতো অনেক কিছু তুমি পাবে।


আর হ্যাঁ, আজ রাতে আমার দিনের সেরা তিন মুহূর্তের মধ্যে আমি তোমাদের কথাও লিখব। লিখব, তোমরা আমার মধ্যে আশা আর ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি সঞ্চার করেছ।


অবশেষে আমি যে আমার লম্বা বক্তব্যটা শেষ করতে যাচ্ছি, তোমরাও এই আনন্দের মুহূর্তটার কথা লিখে রাখতে পারো (হাসি)। পুরো পৃথিবী তোমাদের অপেক্ষায় আছে। এই অপার সম্ভাবনাকে তোমরা কীভাবে কাজে লাগাও, দেখার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।


অভিনন্দন আবারও। (সংক্ষেপিত)


ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ


সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

Sunday, April 1, 2018

ইলন মাস্কের সাফল্যের ১০ সূত্র


ইলন মাস্ক

রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। টেসলা, পেপ্যালসহ আরও বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। গত ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্সের তৈরি রকেট ফ্যালকন হেভির সফল উৎক্ষেপণের পর তুমুল আলোচিত হয়েছেন তিনি। পড়ুন তাঁর সাফল্যের সূত্র

১. স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান সমালোচনা


চাকরি বা ব্যবসা—আপনি যা-ই করেন না কেন, নিশ্চয়ই কোনো না কোনো পণ্য তৈরি করছেন। আপনার পণ্যটাকে নিখুঁত করতে হলে মানুষের প্রতিক্রিয়া জানা প্রয়োজন। দুর্বল লোকেরা সমালোচনায় হতাশ হয়ে পড়েন। আর মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা সমালোচনাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে উন্নত করেন। মানুষের প্রতিক্রিয়া তাঁরা মন দিয়ে শোনেন। বোঝার চেষ্টা করেন, এই প্রতিক্রিয়ার কতখানি সত্য। ভাবেন, কোথায় কোথায় নিজেকে আরও উন্নত করা যায়। এই বিশ্বাস থেকেই সমালোচনাকে ভালোবাসেন ইলন মাস্ক। তিনি বলেন, ‘আপনি যা-ই করেন না কেন, একজন সুবিবেচকের সমালোচনা আপনার কাছে স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান।’ বটে, সমালোচকেরাই তো আপনার ভুল ধরিয়ে দেবে!

২. হার মানতে নেই


যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টিভি চ্যানেল সিবিএসের একজন সাংবাদিকের সঙ্গে ইলন মাস্কের কথোপকথনের একটি অংশ শুনুন।

: আপনি যখন পরপর তিনবার ব্যর্থ হলেন, হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা মাথায় আসেনি?

: কখনো না।

: কেন?

: আমি কখনোই হার মানিনি। মৃত্যু এলে কিংবা একেবারে অক্ষম হয়ে গেলে তবেই কেবল আমি হার মানব।

ইলন মাস্কের কথা যে কেবল কথার কথা নয়, তাঁর পেছনের দিনগুলোতে তাকালেই বোঝা যায়। স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন ১ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি।

৩. প্রচারের চেয়ে উন্নয়ন জরুরি


অনেকে প্রতিষ্ঠান প্রচারের জন্য যত টাকা ব্যয় করে, পণ্যের মান উন্নয়নের জন্য ততটা ব্যয় করতে আগ্রহী হয় না। টেসলা সম্পর্কে মাস্কের বক্তব্য, তারা কখনোই বিজ্ঞাপনের জন্য তেমন খরচ করেনি, যতটা পণ্যের উন্নয়নের জন্য করেছে। এই মনোভাব শুধু যে সময়, শক্তি ও অর্থ বাঁচায় তা নয়, দ্রুত সামনে এগোতেও সাহায্য করে। মাস্ক বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান দ্বিধায় পড়ে যায়। তারা এমন সব খাতে টাকা ব্যয় করে, যেগুলো তাদের উৎপাদনকে উন্নত করে না।’ এমন ব্যয় মোটেও কোনো কাজের নয় বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।

৪. জীবন হোক রোমাঞ্চকর


ইলন মনে করেন, জীবনটা খুব ছোট। আপনি যে কাজটা পছন্দ করেন না, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই একই কাজ করার কোনো মানে হয় না। বেরিয়ে পড়ুন, পাহাড়ে চড়ুন, বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান...রোমাঞ্চ উপভোগ করুন। আপনি তো রোবট নন। ইলন বলেন, ‘মঙ্গলে বসতি গড়ার কল্পনা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে। প্রতিদিন কিছু সমস্যা সমাধানের চাইতে জীবনটা অনেক বড়। অতএব, জেগে উঠুন আর ভবিষ্যতের কল্পনায় রোমাঞ্চিত হোন।’

৫. যতটা সম্ভব পরিশ্রম করুন


পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। হোক সেটা মানসিক কিংবা শারীরিক—একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই আপনি সফলতা অর্জন করতে পারেন। পরিশ্রম প্রসঙ্গে ইলন মাস্ক বলেন, ‘কেউ সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছে আর আপনি হয়তো ১০০ ঘণ্টা কাজ করছেন। আপনারা দুজন হয়তো একই কাজ করছেন। নিশ্চিত থাকুন, অন্য মানুষটি যেটা এক বছরে অর্জন করবে, সেটা আপনি মাত্র চার মাসেই অর্জন করতে পারবেন।’ তবে কাজের সঙ্গে শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা থাকাটাও প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন তিনি।

৬. ভালোবাসার ক্ষেত্রটিতেই কাজ করুন


ইলন মাস্ক বলেন, যে কাজটি আপনি করছেন সেটাকে ভালোবাসা খুব জরুরি। যদি তা না হয়, তাহলে মনে হবে, আপনি নিজের ওপর জোর খাটাচ্ছেন। এভাবে হয়তো কিছুদিন চলতে পারবেন। কিন্তু যখন কঠিন সময় আসবে, তখন আর সামলাতে পারবেন না। অতএব, সেই কাজই বেছে নিন, যেটা আপনি সহজাতভাবেই পছন্দ করেন। হোক সেটা গান, গণিত কিংবা মহাকাশবিদ্যা। অনেকেই নিজের ভালো লাগার জায়গাটা ধরতে পারেন না। দ্বিধায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন, লক্ষ করুন, কোন কাজটিতে আপনি সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছেন। নিজেকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন। শিগগিরই পছন্দের জায়গাটা ধরতে পারবেন। ইলন বলেন, ‘যদি আপনি কাজটাকে ভালোবাসেন, তাহলে নিশ্চয়ই কাজের সময় ছাড়াও আপনি এটা নিয়ে ভাববেন। আপনার মস্তিষ্ক এই ভাবনার সঙ্গে অভ্যস্ত। আর যদি পছন্দ না করেন, জোর করে এটা সম্ভব নয়।’

৭. ঝুঁকি নিন


ঝুঁকি নেওয়ার কথা সম্ভবত তাঁর মুখেই সবচেয়ে ভালো মানায়! বারবার ঘুরেছে তাঁর জীবনের মোড়। জিপ টু বিক্রি করে তিনি এক্স ডটকম শুরু করেছেন, পেপ্যালের মতো একটা সফল প্রতিষ্ঠানে নিজের শেয়ারের অংশটা বিক্রি করে দিয়ে তিনি স্পেসএক্সের পেছনে লগ্নি করেছেন। ইলন বলেন, ‘কোনো কিছু করা দরকার মনে হলে প্রতিকূল পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হলেও আপনি সেটা করবেন।’ হ্যাঁ, পুরো ব্যাপারটিই ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। তবে জীবনে কিছু পেতে হলে ঝুঁকি তো নিতেই হবে!

৮. ‘হোমওয়ার্ক’ জরুরি


বিচিত্র সব খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন ইলন মাস্ক। বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের রহস্যটা কী? রহস্য হলো, প্রস্তুতি না নিয়ে তিনি মাঠে নামেন না। তিনি যখন মহাকাশ ও অ্যারোনটিকসের দুনিয়ায় পা রাখলেন, অনেক শিল্পপতি ধরে নিয়েছিলেন, শখের বশেই হয়তো এই খাতে টাকাগুলো খরচ করছেন তিনি। কদিন পর নিশ্চয়ই ব্যর্থ হবেন। ভুল। নিজের লক্ষ্য ঠিক না করে ইলন পা বাড়াননি।

৯. মরিয়া হয়ে লড়াই করুন


আপনার কাছে ১০০ টাকা আছে, আপনি আজকের দিনের খাবার কিনতে পারবেন। কিন্তু তাই বলে আপনার কি বসে থাকাটা উচিত? ইলন মাস্ক সেটা একেবারেই মনে করেন না। অনেক কিছু থাকতেই পারে হাতে, হতে পারে কাজ করার খুব বেশি তাড়া নেই। তবে তাই বলে ধীরে-সুস্থে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন আর মরিয়া হয়ে কাজ করুন। লড়াই করুন নিজের সঙ্গে! নিজের সেরাটা বের করে আনুন।

১০. পড়তে হবে


বিখ্যাত মানুষেরা সব সময়ই পড়ার ওপর জোর দেন। ইলন মাস্কও ব্যতিক্রম নন। ইলনের বয়স যখন নয় বছর, তখন তিনি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পুরোটা পড়ে ফেলেছিলেন! সে সময় বিজ্ঞান কল্পকাহিনি পড়ে গড়ে ১০ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতেন। আজ সেই মানুষটির হাত ধরেই মঙ্গলে বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখছে মানুষ। ভার্জ ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমার ছোট্ট লাইব্রেরিতে মহাকাশ-সম্পর্কিত যত বই আছে, সব আমি পড়েছি।’

গ্রন্থনা: প্রথম আলো - ১৪ এপ্রিল ২০১৮,, সূত্র: এন্ট্রাপ্রেনার ডটকম