Monday, July 7, 2025

চাকরির ইন্টারভিউয়ে জেফ বেজোস একটা উদ্ভট কিন্তু দুর্দান্ত প্রশ্ন করতেন, কী সেটা

 অ্যামাজনের এক্সিকিউটিভ থেকে বিনিয়োগকারী হওয়া ড্যান রোজ তাঁর এক্স হ্যান্ডলে বলেছেন,  ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমি যখন অ্যামাজনে কাজ করতাম, তখন জেফ বেজোসের প্রিয় ইন্টারভিউ প্রশ্ন ছিল -আপনি কি ভাগ্যবান?

হয়তো ভাবতে পারেন, বিশ্বের অন্যতম ধনী মানুষটা কি তাহলে ভাগ্যেও বিশ্বাসী? নাকি তিনি আশা করতেন নতুন কর্মীদের সৌভাগ্য তাঁর কোম্পানিতেও জাদুর মতো কাজ করবে? সম্ভবত তা নয়।

বেজোস–বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রশ্নটি ছিল কয়েকটা গুণ পরখ করার দারুণ এক উপায়। এর মধ্যে আছে নম্রতা, উদ্যোগ এবং আশাবাদ। চলুন, বিষয়গুলো বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করা যাক।


সৌভাগ্য মানে নম্রতা

বেজোস তাঁর কর্মীদের মধ্যে নম্রতা খুঁজতেন। তাঁদের কাছে অতীতের ভুলগুলো জানতে চাইতেন। কারণ, তাঁর বিশ্বাস, যাঁরা ভুল স্বীকার করেন এবং সেখান থেকে শেখেন, তাঁরাই সত্যিকারের বুদ্ধিমান। ‘আপনি কি ভাগ্যবান?’—এই প্রশ্নের মাধ্যমে বেজোস চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে নম্রতা খুঁজতেন।

অ্যামাজনের একজন বিনিয়োগকারী প্যাট্রিক মায়ারের মতে, ‘ভাগ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা নম্রতা মাপার দুর্দান্ত উপায়।’

বেজোসের প্রশ্নটি নিয়ে প্যাট্রিক এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, ‘কেউ যদি স্বীকার করেন যে তিনি ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছেন, তবে এটা তাঁর বিনয়ের লক্ষণ।’

এর মানে হলো আপনি বোঝেন যে আপনার সাফল্য শুধু বুদ্ধি আর পরিশ্রমের কারণে আসেনি। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকাও একটা বড় ব্যাপার। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আপনি কৃতজ্ঞ এবং নিজেকে আরও উন্নত করতে চান।

বেজোসের মতো আরেক মার্কিন বিলিয়নিয়ার মার্ক কিউবেনও বলেন, ‘বিলিয়নিয়ার হতে হলে আপনার যে একটা জিনিস থাকতে হবে, সেটা হলো ভাগ্য।’


সৌভাগ্য মানে উদ্যোগ

বেজোসের সূত্র অনুযায়ী, যাঁরা নিজেদের ভাগ্যের কথা অস্বীকার করেন, তাঁরা একটু অহংকারী হতে পারেন। কিন্তু যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন, তাঁদের নিয়োগ দেওয়ার আরও একটা কারণ আছে।

বিজ্ঞান বলে, ভাগ্য সব সময় হঠাৎ করে আসে না। ভাগ্যবান মানুষেরা নিজেদের স্বভাব ও কাজের মাধ্যমে নিজেরাই ভাগ্য তৈরি করেন।

একটি পরীক্ষায় বিষয়টি চমৎকারভাবে প্রমাণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় কয়েকজন অংশগ্রহণকারীকে একটি পত্রিকা দিয়ে বলা হয়েছিল, এর মধ্যে থাকা ছবিগুলো যত দ্রুত সম্ভব গুণে শেষ করতে হবে।

কেউ কেউ উত্তর দিতে কয়েক মিনিট সময় নিলেন। আবার বাকিরা মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই উত্তর দিয়ে দিলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? যাঁরা সহজে উত্তর দিলেন, তাঁদের কি ভাগ্য সহায়তা করেছে? মোটেও না।

আদতে পরীক্ষকেরা পত্রিকার দ্বিতীয় পাতায় একটি বাক্সে লিখে রেখেছিলেন, ‘এই পত্রিকায় ৪৩টি ছবি আছে। আপনি এখন পড়া বন্ধ করতে পারেন।’
যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতেন, তাঁরা সহজেই বাক্সটি দেখতে পান এবং পাতা না উল্টিয়েই উত্তর দিয়ে দেন।

লোকে যেটাকে ‘সৌভাগ্য’ বলে, তা আদতে চারপাশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সুযোগের দিকে নজর রাখা। বেজোস ঠিক এটাই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে দেখতে চাইতেন।


সৌভাগ্য মানে আশাবাদ

সবশেষে নিজেকে ভাগ্যবান বলার মানে শুধু এটা নয় যে অতীতে আপনার সঙ্গে ভালো কিছু ঘটেছে। এর মানে হলো, আপনি ভবিষ্যতেও ভালো কিছু ঘটার আশা করেন। এককথায়, যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান বলেন, তাঁরা সাধারণত আশাবাদী হন।

আর মনোবিজ্ঞান বলে, ব্যবসায় ভালো করার জন্য আশাবাদী মনোভাব খুব দরকার।
অবশ্যই, অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়াও ঠিক নয়। কারণ, দুশ্চিন্তা আমাদের খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, যাঁরা সুযোগের ওপর বেশি মনোযোগ দেন, তাঁরা আরও বেশি সৃজনশীল এবং বুদ্ধিমান হন।


যে কারণে বেজোসের প্রশ্নটি অদ্ভুত কিন্তু দুর্দান্ত

এসব থেকেই বোঝা যায়, বেজোসের প্রিয় প্রশ্নটি অদ্ভুত শোনালেও এর পেছনে যথেষ্ট যুক্তি ছিল। ভাগ্যবান হওয়ার মানে শুধু দৈবক্রমে কিছু পাওয়া নয়। বরং নিজেকে ভাগ্যবান ভাবাটা প্রমাণ করে যে একজন ব্যক্তি নম্র, (ইতিবাচকভাবে) সুযোগসন্ধানী, কর্মঠ এবং ভবিষ্যতের ওপর বিশ্বাস রাখতে ইচ্ছুক।

তো এসব গুণ যাঁর মধ্যে আছে, তেমন প্রার্থীকে চাকরি দিতে কে না চাইবে?

সূত্র: মিডিয়াম

Sunday, June 30, 2024

রজার ফেদেরারের যে কথাগুলো আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে: ‘অনায়াসে’ বলে কিছু নেই ও শুধুই একটা পয়েন্ট

এখানে দাঁড়িয়ে আমি কতটা রোমাঞ্চিত, তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। আক্ষরিক অর্থেই জীবনে দ্বিতীয়বার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এসেছি। অথচ বাড়ি ফিরব একটা ডক্টরেট ডিগ্রি (সমাবর্তনেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে দিয়েছে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব হিউমেন লেটারস’) নিয়ে, ভাবা যায়!


‘ড. রজার’। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত বিজয়!

এই পোশাকে আমি একেবারেই অভ্যস্ত নই। ডার্টমাউথে তোমরা প্রতিদিনই এসব পরে আসো নাকি! ভালো কথা, মনে করিয়ে দিই, জীবনের ৩৫টা বছর প্রায় পুরোটা সময়ই আমি শর্টস পরে কাটিয়েছি।

১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে পুরোদস্তুর টেনিস খেলা শুরু করি। কলেজে আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে হ্যাঁ, সম্প্রতি গ্র্যাজুয়েট হয়েছি। আমি গ্র্যাজুয়েট হয়েছি টেনিসে। জানি, শব্দটা আদতে ‘অবসর’। ‘রজার ফেদেরার টেনিস থেকে অবসর নিয়েছেন।’ অবসর...জঘন্য একটা শব্দ। আজ তোমাদের তো কেউ বলছে না, তোমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘অবসর’ নিচ্ছ!

স্নাতকেরা, তোমাদের ব্যথা আমি ‍বুঝি। লোকে যখন বলে, ‘তা সামনের জীবন নিয়ে তোমার পরিকল্পনা কী, শুনি?’ তখন কেমন লাগে জানি। এই প্রশ্ন আমিও শুনি। ‘তুমি তো এখন আর পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় নও। আজকাল করো কী?’

উত্তর হলো, আমি জানি না এবং এই না জানায় কোনো দোষ নেই।

কীভাবে সময় কাটাই? প্রথমত, আমি একজন বাবা। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাই? অনলাইনে অচেনা লোকদের সঙ্গে দাবা খেলি? ঘর পরিষ্কার করিনা। সত্য হলো, আমি আমার টেনিস গ্র্যাজুয়েট–জীবনটা উপভোগ করছি। আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি ২০২২ সালে। তোমরা ২০২৪। অতএব জীবনের রূপান্তরের এই সময়টা নিয়ে কিছু পরামর্শ তো দিতেই পারি।

‘অনায়াসে’ বলে কিছু নেই


মানুষ আমাকে নিয়ে বলে, কী অনায়াসেই না লোকটা খেলে। কিন্তু সত্যিটা হলো, কাজটাকে ‘অনায়াস’ দেখানোর জন্য আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। বছরের পর বছর আমি আর্তচিৎকার করেছি, খেঁকিয়ে উঠেছি, র‍্যাকেট ছুড়ে ফেলেছি...তারপর মাথা ঠান্ডা রাখতে শিখেছি।
সমাবর্তনেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে দিয়েছে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব হিউমেন লেটারস’ছবি: এএফপি


আত্মোপলব্ধিটা এসেছিল ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিকেই। যখন ইতালীয় এক প্রতিপক্ষ বলেছিল, ‘প্রথম দুই ঘণ্টা রজার থাকবে চালকের আসনে। তারপরই পাশার দান উল্টে যাবে।’

তার কথা শুনে শুরুতে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। পরে বুঝেছি, এ কথার মানে কী। প্রথম দুই ঘণ্টা ভালো খেলতে সবাই পারে। শুরুতে সবাই-ই ফিট থাকে, ক্ষিপ্র থাকে। মাথা পরিষ্কার থাকে। কিন্তু এরপরই একসময় পা টলমল করে। ভাবনা এলোমেলো হয়ে আসে, সংযম হারিয়ে যায়।

তাই আমি আরও কঠোর প্রশিক্ষণ শুরু করি। আর বুঝতে পারি, অনায়াসে জিততে পারাটাই সবচেয়ে বড় অর্জন।








গা গরম করার সময়, টুর্নামেন্ট চলার সময় খুব ‘সহজ’ দেখায় বলে আমার সুনাম আছে। অথচ এর পেছনে যে কত কঠোর প্রশিক্ষণ আছে, লোকে ভাবতেও পারবে না। সেই পরিশ্রমটা কেউ দেখে না।

শুধুই একটা পয়েন্ট


কঠোর পরিশ্রম সত্ত্বেও তুমি হেরে যেতেই পারো। আমি হেরেছি।

টেনিস বড় নিষ্ঠুর। প্রতিটি টুর্নামেন্ট একইভাবে শেষ হয়। একজন ট্রফি জেতে। অন্যরা প্লেনে করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে জানালা দিয়ে তাকিয়ে ভাবে, ‘ইশ্‌! এমন একটা শট কীভাবে মিস করলাম!’

ধরো, আজ তোমাদের সঙ্গেও যদি এমন হতো? যদি কেবল একজনের হাতে ডিগ্রি তুলে ‍দিয়ে বলা হতো, ‘সবাই করতালি দাও। যে স্নাতক হলে, তোমাকে অভিনন্দন। অন্যদের জন্য শুভকামনা।’ কেমন লাগত বলো?

এ কারণেই না হারার আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছি, কিন্তু হেরেছি। আমার জন্য সবচেয়ে বড় পরাজয়ের মুহূর্ত ছিল ২০০৮ সালের উইম্বলডনের ফাইনাল। আমি বনাম (রাফায়েল) নাদাল। অনেকে বলে, ওটাই টেনিস ইতিহাসের সেরা ম্যাচ। রাফার প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলছি, খেলাটা আরও অনেক অনেক রোমাঞ্চপূর্ণ হতো, যদি আমি জিততাম।

টেনিসে নিখুঁত খেলা অসম্ভব। আমি ক্যারিয়ারে ১ হাজার ৫২৬টি ম্যাচ খেলেছি। ৮০ শতাংশ ম্যাচে জিতেছি। অথচ কত শতাংশ পয়েন্ট পেয়েছি বলো তো? মাত্র ৫৪ শতাংশ।

কেন বলছি এসব কথা? যখন তুমি একটা পয়েন্টের জন্য খেলো, তখন ওই পয়েন্টই তোমার জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যখন পয়েন্টটা পেছনে ফেলে আসো, তখন সেটা শুধুই একটা ‘পয়েন্ট’। আর কিচ্ছু না।

জীবনে যে খেলাই খেলো না কেন, কখনো না কখনো তুমি হারবে। একটা পয়েন্ট হারাবে, একটা ম্যাচ হারাবে, একটা মৌসুম হারাবে, একটা চাকরি হারাবে...অনেকটা রোলারকোস্টার রাইডের মতো। যেখানে অনেক ওঠানামা। পৃথিবীর সেরা মানুষেরা কিন্তু এ কারণে সেরা নন যে তাঁরা প্রতিটি পয়েন্ট জেতেন। বরং তাঁরা জানেন, একটা পয়েন্ট হারালে কীভাবে সামাল দিয়ে আবার একটা পয়েন্ট জিততে হয়। (সংক্ষেপিত)

সূত্র: ডার্টমাউথের ওয়েবসাইট

Tuesday, February 25, 2020

বাবার ৫ উপহার: শাহরুখ খান

শাহরুখ খান।

source: প্রথম আলো, ফিচার- স্বপ্ন নিয়ে, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান বক্তৃতা দিয়েছিলেন ভারতের মুম্বাইয়ের ধীরুভাই আম্বানি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মাধ্যমিক পেরোনো শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে। সেখানে শাহরুখ কথা বলেছেন তাঁর বাবা তাজ মোহাম্মাদ খানকে নিয়ে। বাবার কাছ থেকে পাওয়া পাঁচটি উপহারের কথা বলেছেন শাহরুখ। উপহারগুলো বলিউডের এই মহাতারকার সাফল্যের পেছনে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান, দিয়েছে শিক্ষা। শাহরুখের সেই বক্তৃতার কিছু অংশ থাকছে আজ।

আজ আমি আমার বাবাকে নিয়ে কিছু কথা বলব। তিনি ছিলেন খুব বিনয়ী। আইন বিষয়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করেছিলেন। সাতটা ভাষা জানতেন। বিশ্বের নানা দেশে ঘুরেছেন। রাজনীতি বুঝতেন, নিজ দেশ ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন। হকি, সাঁতার, পোলোর মতো খেলায় পারদর্শিতা ছিল তাঁর। রান্না করতে জানতেন। আবৃত্তি করতেন। আর পৃথিবীর যেকোনো দেশের রাজধানীর নাম জিজ্ঞেস করলে মুহূর্তেই বলতে পারতেন।


শাহরুখ খান।
শাহরুখ খান।
বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান বক্তৃতা দিয়েছিলেন ভারতের মুম্বাইয়ের ধীরুভাই আম্বানি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মাধ্যমিক পেরোনো শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে। সেখানে শাহরুখ কথা বলেছেন তাঁর বাবা তাজ মোহাম্মাদ খানকে নিয়ে। বাবার কাছ থেকে পাওয়া পাঁচটি উপহারের কথা বলেছেন শাহরুখ। উপহারগুলো বলিউডের এই মহাতারকার সাফল্যের পেছনে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান, দিয়েছে শিক্ষা। শাহরুখের সেই বক্তৃতার কিছু অংশ থাকছে আজ।

আজ আমি আমার বাবাকে নিয়ে কিছু কথা বলব। তিনি ছিলেন খুব বিনয়ী। আইন বিষয়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করেছিলেন। সাতটা ভাষা জানতেন। বিশ্বের নানা দেশে ঘুরেছেন। রাজনীতি বুঝতেন, নিজ দেশ ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন। হকি, সাঁতার, পোলোর মতো খেলায় পারদর্শিতা ছিল তাঁর। রান্না করতে জানতেন। আবৃত্তি করতেন। আর পৃথিবীর যেকোনো দেশের রাজধানীর নাম জিজ্ঞেস করলে মুহূর্তেই বলতে পারতেন।


আমার বাবা একজন দরিদ্র মানুষও ছিলেন। লম্বা সময় বেকারত্বে ভুগেছেন। জীবনের ১৫ বছর পর্যন্ত দেখেছি, তিনি আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য কতটা সংগ্রাম করেছেন। ১০ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাবা আমার জন্য কোনো ঝকমারি উপহার কিনতে পারেননি। সেই সামর্থ্য তাঁর ছিল না। তিনি তাঁর নিজের খুব কাছের কোনো পুরোনো জিনিস পত্রিকায় মুড়িয়ে আমাকে জন্মদিনে উপহার হিসেবে দিতেন। তাঁর সেই জিনিস তখন থেকে আমার হয়ে যেত। আমি আজ বাবার কাছ থেকে পাওয়া সেই পাঁচ উপহার নিয়ে কথা বলব। সেই সঙ্গে বলব, কী করে এই উপহারগুলো আমাকে আজকের ‘আমি’ বানিয়েছে, আমাকে নিয়ে এসেছে আজকের এই অবস্থানে।

১. দাবা সেট
আমার বয়স যখন ১০। বাবা আমাকে একটা দাবার সেট উপহার দেন। অনেকেই বলে, দাবা হলো জীবনের প্রতিচ্ছবি। এটা খুব পুরোনো শোনালেও কথাটা সত্য। প্রথমেই এটা যা শেখায় তা হলো আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপেরই আছে কোনো না কোনো পরিণতি, আমরা এটা মানি বা না মানি। জীবনেও এমন কোনো পদক্ষেপ নেই, এমন কোনো মুহূর্ত নেই, যা অর্থহীন; কিংবা যার কোনো পরিণতি নেই। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপই আমাদের কোনো না কোনো পরিস্থিতির দিকে টেনে নিয়ে যায়। শূন্য মুহূর্ত বা অর্থহীন পদক্ষেপ বলে জীবনে কিছু নেই। তাই প্রতিটি মুহূর্তকেই জীবনের অংশ করে নাও। দেখবে জীবনটা আদতে আর দাবার ঘরের মতো সাদাকালো লাগবে না, মনে হবে না তুমি দাবার চারকোনা ঘরে বন্দী হয়ে আছ। তোমার চারপাশ অনেক বিস্তৃত হয়ে যাবে। কোনো কোনো সময় এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের কয়েক ধাপ পেছাতে হতে পারে। অল্প সময়ের জন্য এই পিছিয়ে পড়ায় কোনো ক্ষতি নেই; বরং এই পিছিয়ে পড়াই তোমার জন্য সাফল্য নিয়ে আসতে পারে।

হয়তো রানি দেখতে আকর্ষণীয় মনে হতে পারে, কিন্তু দাবার ঘরে তাকে বাঁচাতে গিয়ে আমাকে যদি মন্ত্রী খোয়াতে হয়, তাহলে তখন পুরো রাজ্য নিয়ে আমাকে দুশ্চিন্তায় পড়ে যেতে হবে। তাই রানির মোহ কাটিয়ে কোনো কোনো সময় আমাদের কিস্তি কিংবা ঘোড়া সওয়ারের জন্য লড়াই করতে হয়। দাবায় যদি আমরা ছোট ছোট দিকগুলোর দিকে নজর না দিই, একটা সৈন্যের চালও যে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, তা না মানি, তাহলে কিন্তু খেলায় এগোতে পারব না। জীবনের বেলায়ও তা–ই। আমরা যদি জীবনের ছোট ছোট দিকগুলোকে গুরুত্ব না দিই, ক্ষুদ্র অর্জনগুলোর মূল্যায়ন না করি, আমরা কখনোই জীবনের বড় সাফল্যের দিকে যেতে পারব না। আমরা এগোতেই পারব না।

সুযোগ পেলেই আমাদের নিজেদের চারপাশ মন দিয়ে দেখতে হবে। নজর দিতে হবে ছোট ছোট দিকগুলোয়, যার কারণে আমাদের অস্তিত্ব এতটা মসৃণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের জীবনে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাকে আশীর্বাদ না ভেবে, তাকে তুচ্ছজ্ঞান করা হলো সবচেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ।

২. টাইপরাইটার
আমার ছেলেবেলায় কম্পিউটার মোটেই প্রচলিত ছিল না, ছিল না আইফোনও। তাই তখনকার সময়ে পাওয়া আমার সবচেয়ে দামি উপহারটি ছিল বাবার ইতালীয় টাইপরাইটার। আমি তাঁর কাছ থেকেই এই টাইপরাইটার চালানো শিখেছি। শিখেছি কীভাবে তাতে টাইপ করতে হয়। কী করে রোলার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাতে কাগজ দিতে হয়, লিভারটা চাপতে হয়। আঙুল দিয়ে টাইপরাইটারের বোতাম চাপার খটখট শব্দ শোনায়, সাদা কাগজে লেখা দিয়ে ভরিয়ে ফেলায় আমি এক অদ্ভুত আনন্দ পেয়েছিলাম।

টাইপরাইটার সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য অধ্যবসায় খুব জরুরি। একটা ভুল অক্ষরে চাপ দিলেই আবার শুরু থেকে সব শুরু করা লাগে। এ ক্ষেত্রে ভুল শুধরানোর জন্য ‘টাইপ এক্স’ বলে একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু একটা লেখায় ভুল কাটানোর জন্য অতিরিক্ত ‘টাইপ এক্স’ও আবার ব্যবহার করা যেত না। তাই আমাদের মন দিয়ে শিখতে হয়েছে, কী করে খুব ভেবেচিন্তে নিখুঁতভাবে টাইপরাইটারে হাত ঘোরাতে হয়, নিজের ভাবনাকে কাগজে তুলে আনতে হয়। আর নির্ভুল থাকার জন্য বারবার এই চর্চা করেই যেতে হয়। আমি যত বড় হয়েছি, ততই বুঝতে পেরেছি নিজেকে নির্ভুল করার চর্চা আর অধ্যবসায়ের সঙ্গে পরিশ্রম করে যাওয়ার মানসিকতার চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই।

৩. ক্যামেরা
আমার বাবা আমাকে একটা ক্যামেরা দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা ছিল অকেজো। ক্যামেরার সবচেয়ে দারুণ বিশেষত্ব ছিল এটাই। এ থেকে আমি শিখেছিলাম, জীবনে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সবকিছুই সব সময় সক্রিয় হবে না। মাঝেমধ্যে ভাঙাচোরা জিনিসের চিড় থেকেও সৃষ্টিশীলতার আলো ছড়াতে পারে। আমি ওই ভাঙা ক্যামেরার নিষ্ক্রিয় লেন্স দিয়ে নিজের একটা জাদুর জগৎ দেখতে শুরু করলাম। কোনো ছবি সেই ক্যামেরা দিয়ে আমি তুলতে পারিনি, কিন্তু আমি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটা পেয়েছিলাম সেই অকেজো উপহার থেকে। সেই শিক্ষা হলো—সৃষ্টিশীলতার প্রক্রিয়া শুরু হয় আত্মা থেকে। এই প্রক্রিয়া কোনো ফলাফলের প্রত্যাশা ছাড়াই শুরু হয়। পৃথিবী এই সৃষ্টিশীলতা গ্রহণ করবে, আত্মা এমনটা চায়ও না। আমাদের সত্তা শুধু চায় সৃষ্টিশীলতার সত্যিকারের বহিঃপ্রকাশ। এই বহিঃপ্রকাশ একদম ভেতর থেকে আসে। এর সঙ্গে মেকি কোনো কিছু যায় না। যেভাবে তুমি চাইবে, তোমার পৃথিবীতে তোমার সৃষ্টিগুলো ঠিক তেমনই দেখাবে। তাই নিজের মেধা ও সৃষ্টিশীলতাকে নিয়ে দ্বিধায় থেকো না, বরং একে সম্মান করো। তোমার সৃষ্টি সব সময় পৃথিবীর মানুষ বুঝতে পারবে, গ্রহণ করবে, এমন প্রত্যাশা কোরো না। কোনো সৃষ্টি সবার বোধগম্য হবে, এমনটা নয়। সব শিল্পই যে বিক্রয়যোগ্য হবে, তা-ও নয়। কিছু সৃষ্টি, কিছু শিল্পের মহত্ত্ব জাগতিক হিসাব-নিকাশের ঊর্ধ্বে। কিছু সৃষ্টি শুধু নিজের জন্য তুলে রাখতে হয়। যখন আমরা একা থাকি, তখন তারা আমাদের সঙ্গ দেয়। আমি যেমন কবিতা লিখি। খুব বাজে লিখি আমি। মাঝেমধ্যে একা একা সেগুলো পড়তেও বিব্রত লাগে, কিন্তু এরপরও আমি লিখি। কারণ, লিখে যে আনন্দ আমি পাই, সেই আনন্দ শুধুই আমার একার। এই আনন্দ আমাকে স্বাধীনতার স্বাদ দেয়।

৪. রসবোধ
আমার বাবা ছিলেন মজার মানুষ। যেকোনো গম্ভীর পরিস্থিতিকে রসিকতা দিয়ে স্বাভাবিক করার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তাঁর। রসবোধ ছাড়া পৃথিবী একটা নীরস আর লোভী মানুষের রাজ্য হয়ে উঠত। বাবার রসবোধের ঘটনা বলি।

আমরা সে সময় একটা ভবনের তিনতলায় থাকতাম। আমি আর আমার বন্ধু বারান্দা থেকে অনেক আজেবাজে জিনিস দুষ্টুমি করে নিচতলার বারান্দায় ফেলতাম। নিচতলায় থাকা বুড়ো লোকটা একদিন বিরক্ত হয়ে গেলেন। নিচ থেকে চিৎকার করে বলতে থাকলেন, ‘ভাই ভাই, ওপর থেকে জিনিস নিচে পড়ছে। ওপর থেকে জিনিস নিচে পড়ছে।’ আমি তো ভয়েই শেষ। বাবা বারান্দায় এসে ঠান্ডা মাথায় অবস্থা দেখে বললেন, ‘চাচা, ওপর থেকে যে জিনিস নিচে পড়ে, এটা নিউটন অনেক বছর আগেই আবিষ্কার করেছেন। আপনি যদি নতুন কিছু বলতে চান, তাহলে বাসায় চলে আসুন। চা খেতে খেতে কথা বলি।’ সঙ্গে সঙ্গেই পুরো পরিস্থিতি একদম স্বাভাবিক হয়ে গেল।

এ থেকে আমি শিখেছিলাম, সুযোগ পেলে নিজেকে নিয়েও হাসতে দ্বিধা কোরো না। যদি একবার নিজেকে যেকোনো পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ও সহজভাবে নিতে শিখে নেওয়া যায়, তাহলে কোনো হতাশা, কোনো অবসাদ, ব্যর্থতা আমাদের ভাঙতে পারবে না। রসবোধ হলো পৃথিবীর বাস্তবতাকে দেখার স্বচ্ছ কাচ। এটা হলো টিকে থাকার রক্ষাকবচ। তরুণ আর শিশুসুলভ থাকার আমৃত্যু টিকিট হলো রসবোধ।

৫. জীবন
আমার বাবা আমাকে সবচেয়ে সুন্দর আর সর্বশেষ যে উপহার দিয়েছেন, সেটার মর্ম আমি বুঝেছি যেদিন তিনি মারা গেলেন। আমার বয়স তখন ১৫। উপহারটা প্রত্যেক মা–বাবা তাঁদের সন্তানদের দিয়েছেন। উপহারটি হলো ‘জীবন’। এই উপহারের সৌন্দর্যকে আর কোনো উপহার, কোনো আশীর্বাদই স্পর্শ করতে পারে না। জীবনের সৌন্দর্য অন্য সব সৌন্দর্যকে ছাড়িয়ে যায়। তাই জীবনের প্রতি সব সময় আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কৃতজ্ঞ থাকা উচিত তাঁদের প্রতি, যাঁরা এই জীবন আমাদের দিয়েছেন, অর্থাৎ মা–বাবার প্রতি। জীবনের লাবণ্যকে আমরা উপলব্ধি করতে পারলে আর এই উপলব্ধি সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে পারলে তুমি তোমার স্বপ্নের চেয়েও বড় হতে পারবে। তাই জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ হও, মা–বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।


ভুল করো, ভুল থেকে শেখো, মুক্ত হও, সাহসী হও, জীবনকে উপভোগ করো। তাহলেই তুমি সফল হবে। আর যখন তুমি একজন সফল মানুষ হয়ে উঠবে, তখন তোমার সবচেয়ে অপছন্দের শিক্ষককে মনে করে একটা ধন্যবাদ দিয়ো। কারণ, আদতে সেই শিক্ষকই তোমাকে গড়ে তুলেছেন, তোমাকে নিয়ে ভেবেছেন।




Saturday, September 8, 2018

জ্যাক ডরসির সাফল্যের ১০ সূত্র




জ্যাক ডরসি
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টুইটার ও স্কয়ারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি। পড়ুন তাঁর সাফল্যের রহস্য

১ ভাবনা থেকে শুরু হোক

জ্যাক ডরসি মনে করেন, উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে অনেকেরই একটা ভুল ধারণা আছে। আমি নিজেই নিজের ‘বস’ হতে চাই, অতএব একটা ‘আইডিয়া’ খোঁজা শুরু করলাম...ব্যাপারটা এমন নয়। উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা থেকে ‘আইডিয়ার’ জন্ম হয় না, বরং ‘আইডিয়া’ থেকেই একজন উদ্যোক্তার জন্ম হয়। ডরসি বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে একজন ভাবল, আমি একটা ব্যবসা করতে চাই, তা নয়। বরং ঘুম থেকে উঠে কেউ যদি ভাবে, অমুক বিষয়টায় আমার ভীষণ আগ্রহ, আমি যেকোনো মূল্যে এটা নিয়ে কাজ করতে চাই, তাহলেই একটা সফল ব্যবসার জন্ম হবে।’

২ প্রতিষ্ঠানে থাকুক স্বচ্ছতা

স্কয়ারের মূল কার্যালয়ে একটা নিয়ম সব সময় মানা হয়। যেকোনো মিটিংয়ের সারাংশ একজন টুকে নেন, এরপর সিদ্ধান্তগুলো প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কর্মীকে ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য হলো; আমরা কী করছি, কেন করছি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী—এসব ব্যাপারে যেন সবার সমান ধারণা থাকে। ডরসি বলেন, ‘এর মাধ্যমে আমরা আরও অনেক নতুন নতুন আইডিয়া পাই, ভিন্ন চোখে দেখার সুযোগ পাই। ফলে ভিন্নভাবে ভাবার সুযোগ হয়। প্রতিষ্ঠানে সৃজনশীলতার চর্চা গড়ে ওঠে।’

৩ সঠিক সময়টা কাজে লাগান

টুইটারের ভাবনা প্রথম জ্যাক ডরসির মাথায় এসেছিল ২০০০ সালে। তখনো লেখার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার ধারণা জনপ্রিয়তা পায়নি। একজন আমেরিকান সে সময় গড়ে মাসে ৩৫টি খুদে বার্তা লিখত। ভ্যানিটি ফেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্যাক ডরসি বলেছেন, ‘তখনো বার্তা পাঠানোর জন্য মোবাইলের ব্যবহার ততটা জনপ্রিয় ছিল না, অতএব আমি ভাবনাটা বাস্তবায়নের জন্য ব্যস্ত হইনি।’ ২০০৬ সালের জরিপে দেখা গেল, আমেরিকানরা আরও বেশি ‘টেক্সট’নির্ভর হয়ে পড়ছে। তারা ফোনকলের চেয়ে বেশি খুদে বার্তা ব্যবহার করছে। জ্যাক ডরসি বুঝলেন, এটাই সময়! ২০০৬ সালের জুলাই মাসে যাত্রা শুরু করল টুইটার। এরপরের সাফল্যের গল্প সবার জানা।

৪ ক্যারিয়ার পথ সরলরেখার মতো নয়

টুইটারের যাত্রা শুরুর আগে ফ্যাশন স্কুলে জামার নকশা তৈরি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ডরসি। ‘ইলাস্ট্রেটর’ হিসেবে ক্যারিয়ার মোটামুটি প্রতিষ্ঠিতই ছিল। তাহলে প্রোগ্রামিং আর এই নতুন ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হলেন কেন? ফোর্বস সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আগে যা করেছি, সেগুলো ছিল নিজেকে তৈরি করার প্রক্রিয়ামাত্র।’ ব্যবসায়ী হিসেবেই যে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান, তা নয়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, নিউইয়র্কের মেয়র হওয়ার স্বপ্ন তাঁর।

৫ রুটিন অনুসরণ করুন

ছকে বাঁধা জীবন পছন্দ করেন জ্যাক ডরসি। প্রতিদিন সকালে দুটো সেদ্ধ ডিম আর একটুখানি ফল নাশতার টেবিলে থাকা যেমন তাঁর নিয়ম, তেমনি অফিসের কাজগুলোও একেবারে নিয়মে বেঁধে নিয়েছেন। সোমবার স্কয়ার এবং টুইটার পরিচালনাবিষয়ক সভা, মঙ্গলবারে পণ্য, প্রকৌশল, নকশাবিষয়ক আলোচনা, বুধবারে বিপণন ও যোগাযোগবিষয়ক সভা, বৃহস্পতিবারে প্রতিষ্ঠানের অংশীদার ও ডেভেলপারদের সঙ্গে সময় কাটানো, শুক্রবারে প্রতিষ্ঠানের রীতিনীতিবিষয়ক আলোচনা—পুরো সপ্তাহের রুটিন তাঁর করাই আছে। তিনি স্রেফ রুটিন অনুসরণ করেন।

৬ সহজ ও সুন্দর

টুইটারে ২৮০ বর্ণের মধ্যে মনের কথা বর্ণনা করতে হয়। উদ্দেশ্য হলো, যে কথাটা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই যেন আপনি স্পষ্ট করে বলতে পারেন। বাড়তি কথা ছেঁটে ফেলার এটা একটা উপায়। ব্যক্তিগতভাবে জ্যাক ডরসিও এই নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি মনে করেন, ‘যা আমি বলতে চাই বা যে কাজ করতে চাই, আমার নজর যেন শুধু সেদিকেই থাকে।’ আপনার কাছে টুইটারের অর্থ কী? মাত্র এক শব্দেই সেটা বলে দিতে পারেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা—‘যোগাযোগ’। অল্প কথাই তাঁর কাছে সহজ ও সুন্দর।

৭ ডায়েরি রাখুন

হাইস্কুল জীবন থেকেই নিজের অর্জন, ব্যর্থতা, কর্মকাণ্ডগুলো ডায়েরিতে টুকে রাখতেন জ্যাক ডরসি। তাঁর মতে, এটা তাঁর জীবনের সেরা কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। ডরসি বলেন, ‘নিজের উন্নতির দিকে লক্ষ রাখার জন্য এটা সবচেয়ে সহজ উপায়। কীভাবে আপনি, আপনার ব্যবসা, আপনার নেতৃত্বগুণ একটু একটু করে পরিণত হয়েছে, আপনি সেটা চোখের সামনে দেখতে পাবেন।’

৮ যোগাযোগ আর সহযোগিতাই মূল চাবি

ডরসি বলেন, আপনার প্রতিষ্ঠানের দুটো বিভাগ কিংবা দুটো মানুষ যদি পরস্পরের সঙ্গে কথা না বলে, মিলেমিশে কাজ না করে, তাহলে একটা ফাঁক থেকে যায়। এই ঘাটতির প্রতিফলন থাকবে আপনার পণ্যেও। অতএব সেটা গ্রাহকের দৃষ্টি এড়াবে না। ডরসির বক্তব্য, ‘পণ্যের নকশা বা সেবা প্রদানের কৌশলের ব্যাপারে আমরা যতটা সতর্ক, একই রকম গুরুত্ব পায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাও।’

৯ ছুটির সর্বোত্তম ব্যবহার করুন

অনেকে মনে করে, ছুটির দিনগুলোয় কাজ করা মানেই হলো আরেকটু এগিয়ে থাকা। কিন্তু অনেক সফল মানুষই বোধ হয় এ কথার সঙ্গে একমত নন। জ্যাক ডরসি বলেন, ‘শনিবার আমার ছুটির দিন। এই দিন আমি সব রকম দাপ্তরিক কাজ থেকে দূরে থাকি। রোববার থেকে আমার পুরো সপ্তাহের কাজের জন্য তৈরি হই।’ ছুটির দিনে যেমন পুরো দিনটা উপভোগ করেন, তেমনি কাজের বেলায় কোনো ছাড় দেন না ডরসি। সপ্তাহের ছয় দিন দুই প্রতিষ্ঠানে আট ঘণ্টা করে সময় দেন।

১০ দ্বিধা ঝেড়ে কাজে হাত দিন

টুইটারের শুরুর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলছিলেন জ্যাক ডরসি। ‘নতুন কোনো ভাবনা মাথায় এলে আপনার মাথায় অনেকগুলো “যদি” খেলা করবে। যদি এটা হয়, যদি ওটা হয়...এসব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে কাজে হাত দিন। যত দ্রুত আপনি কাজ শুরু করবেন, তত দ্রুতই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবেন।’


সূত্র: নো স্টার্টআপ

Wednesday, April 4, 2018

শেরিল স্যান্ডবার্গ,ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা



ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ। টাইম সাময়িকীর করা বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় আছে তাঁর নাম। গত ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির (ভার্জিনিয়া টেক) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি



দুই বছর এগারো দিন আগে আমি আমার স্বামী ডেভকে হারিয়েছি। আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিতভাবে। ওর কথা বলতে গেলে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়। কারণ, আমি এখনো ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারি না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময়ও ভেবেছিলাম, দিনটা আর দশটা দিনের মতোই কাটবে। অথচ ওই এক দিনেই আমার জীবনটা বদলে গিয়েছিল।


আমি জানি, আজ তোমাদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। বাইরে সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে। আর আমি কি না এখানে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর কথা বলছি। এর পেছনে একটা কারণ আছে। কথা দিচ্ছি, আমি তোমাদের মন খারাপ করিয়ে দেব না।


ডেভের মৃত্যুর পর পৃথিবীর প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। সে কথাই আজ তোমাদের বলব। কারণ, আমার বিশ্বাস, আমার অভিজ্ঞতা তোমাদের একটা সুস্থ-সুন্দর জীবনের দিকনির্দেশনা দেবে। আজ এখানে পৌঁছানোর পেছনে তোমাদের প্রত্যেকের নিশ্চয়ই বিচিত্র সব গল্প আছে। কেউ কেউ প্রচণ্ড মানসিক চাপের মুখোমুখি হয়েছ। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা তোমাদের হয়েছে। হতাশা, মানসিক যন্ত্রণা, হারানোর ব্যথা, অসুস্থতা—এ সব অনুভূতি খুব ব্যক্তিগত, কিন্তু সর্বজনীন। কিছু কিছু ব্যথা আবার একার নয়। ভার্জিনিয়া টেকের শিক্ষার্থীরা খুব ভালো করে সেটা জানে। আজ সকালে ড্রিলফিল্ডের ‘থার্টি টু হকি স্টোন’-এর সামনে দিয়ে আসার সময় আমি যেমন মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিলাম, তোমরাও নিশ্চয়ই তা-ই করো। (২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ভার্জিনিয়া টেকের ৩২ জন শিক্ষার্থী। তাঁদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২টি স্মৃতিস্তম্ভ আছে—বি.স.) তোমরা জানো, এক মুহূর্তের মধ্যে জীবনটা বদলে যেতে পারে। তোমরা জানো, এই সময়ে সবার একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হয়, শোক অনুভব করতে হয়, নিজেদের টেনে তুলতে হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা, একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।


আমাদের সবারই একটা দল প্রয়োজন। বিশেষ করে তখন, যখন জীবন আমাদের সামনে বাধার দেয়াল তুলে দেয়। ভার্জিনিয়া টেকের বাইরেও তোমরা একেকটা দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই দলটাই সাহায্যের প্রয়োজন হলে এগিয়ে আসবে। আমার জন্য অবশ্য একটা দলের অংশ হওয়া খুব কঠিন ছিল। ডেভের মৃত্যুর আগে আমি আসলে মানুষকে বিরক্ত করতে চাইতাম না। হ্যাঁ, আমার কাছে ব্যাপারটা ‘বিরক্ত করা’ই মনে হতো। কিন্তু ডেভ চলে যাওয়ার পর সব বদলে গেল। কখনো ভাবিনি পরিবার, বন্ধু আর সহকর্মীরা আমার জীবনে এতটা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে।


তোমাদের মধ্যে কেউ কি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছ? ভাবছ ভাগ্য তোমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? মাঝেমধ্যে আমারও এমন ভয় হয়। এই ভয়ের বিরুদ্ধে তুমি কী নিয়ে লড়বে জানো? আশা—ছোট্ট একটা শব্দে লুকিয়ে আছে অনেক বড় ভাবার্থ।


আমরা ভাবি ‘আশা’ প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সম্পদ। কিন্তু ‘ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতার’ পাশাপাশি আশাও কিন্তু দলগতভাবে গড়ে উঠতে পারে। দুই দিন আগে আমি চার্লসটনের মাদার ইমানুয়েল চার্চে গিয়েছিলাম। আমরা সবাই জানি দুই বছর আগে সেখানে গোলাগুলিতে একজন যাজক এবং আটজন ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এরপর যা ঘটেছে তা সত্যিই অনন্য। ঘৃণার বদলে সেখানকার সব মানুষ ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা একসঙ্গে বর্ণবাদ ও হিংস্রতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় যাজক জারমেইন ওয়াটকিনস যেমন খুব সুন্দর করে বলেন, ‘ঘৃণাকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়। বিভেদকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়। আশাহীনতাকে বলি—না, আজকের দিনটা তোমার নয়।’


ফেসবুকে আমি অনেকের লেখাই পড়ি। কিন্তু প্যারিসের সাংবাদিক অ্যান্টয়েন লেইরিসের একটা লেখা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। তাঁর স্ত্রী হেলেন ২০১৫ সালে প্যারিস হামলায় নিহত হয়েছিলেন। এর মাত্র দুই দিন পর লেইরিস তাঁর স্ত্রীর হত্যাকারীদের উদ্দেশে একটা খোলা চিঠি লিখেছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘শুক্রবার রাতে তোমরা কেড়ে নিয়েছ একজন অন্য রকম মানুষকে, আমার ভালোবাসাকে, আমার সন্তানের মাকে। কিন্তু আমার ঘৃণা তোমরা পাবে না। আমার ১৭ মাস বয়সী ছোট্ট ছেলেটা একজন সুখী, স্বাধীন মানুষ হয়ে বেড়ে উঠবে, প্রতিদিন সে হাসবে খেলবে আর তোমাদের বুড়ো আঙুল দেখাবে। কারণ, তার ঘৃণাও তোমরা পাবে না।’


এ রকম অসামান্য শক্তি আমাদেরও শক্তি দেয়। এমন আশা আমাদের মনেও আশা জাগায়। এভাবেই আমরা একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়াই, একে অপরকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করি।


ক্যাম্পাস ছেড়ে তোমরা বাইরের পৃথিবীতে পা রাখতে যাচ্ছ। আমি তোমাদের বলতে চাই, যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নিজের মধ্যে গড়ে তোলো। শোক কিংবা হতাশা যখন আঘাত করে, নিশ্চিত থেকো, খুব গভীরে সেটা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা তোমার আছে।


দুই বছর আগে কেউ যদি আমাকে বলত, ‘ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েও তুমি জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে’—আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন সত্যিই তাই হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ আমার সন্তানদের জন্য, আমার পরিবারের জন্য, আমার বন্ধু, কাজ আর এই জীবনটার জন্য।


কিছুদিন আগে আমার কাজিন লরার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। স্নাতকেরা, জীবনের ৫০টা বছর যে কী দ্রুত কেটে যায় আর তখন যে নিজেকে কতটা বৃদ্ধ মনে হয়, এই অনুভূতি তোমরা বুঝবে না। তোমাদের মা-বাবা নিশ্চয়ই বোঝেন। লরাকে ফোন করে আমি বলেছিলাম, ‘শুভ জন্মদিন লরা। শুধু এ কথা বলার জন্যই আমি তোমাকে ফোন করিনি। তুমি হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভাবতে বসেছ, “হায়, বয়সটা ৫০ ছুঁয়ে ফেলল!” সে ক্ষেত্রে আমি তোমাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এভাবে ভেব না। মনে রেখ, এ বছর তুমি যেমন ৫০ ছুঁয়েছ, ডেভ বেঁচে থাকলে ওর বয়সও ৫০ হতো। ডেভ পারেনি, তুমি তো পেরেছ।’ বুড়ো হই বা না হই, বয়স কোনো কৌতুকের বিষয় নয়। প্রতিটা বছর, প্রতিটা মুহূর্ত...এমনকি এই যে বাইরে বৃষ্টি পড়ছে...এটাও জীবনের একটা উপহার।


নতুন বছরে আমার প্রতিজ্ঞা ছিল, ঘুমাতে যাওয়ার আগে দিনের তিনটি আনন্দের মুহূর্ত আমি লিখে রাখব। এই সহজ অভ্যাস আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আগে প্রতি রাতে বিছানায় শুয়ে ভাবতাম, কত কী ভুল করলাম, আগামী দিন না জানি কত ভুল করতে যাচ্ছি। এখন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভাবি, আজ কী কী পেলাম। দারুণ সব মুহূর্তের স্মৃতি দিয়ে আমার নোটবুক ভারী হয়ে উঠছে। তোমরাও চেষ্টা করে দেখতে পারো, আজই শুরু করো। আজকের দিনটাতে নিশ্চয়ই লেখার মতো অনেক কিছু তুমি পাবে।


আর হ্যাঁ, আজ রাতে আমার দিনের সেরা তিন মুহূর্তের মধ্যে আমি তোমাদের কথাও লিখব। লিখব, তোমরা আমার মধ্যে আশা আর ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি সঞ্চার করেছ।


অবশেষে আমি যে আমার লম্বা বক্তব্যটা শেষ করতে যাচ্ছি, তোমরাও এই আনন্দের মুহূর্তটার কথা লিখে রাখতে পারো (হাসি)। পুরো পৃথিবী তোমাদের অপেক্ষায় আছে। এই অপার সম্ভাবনাকে তোমরা কীভাবে কাজে লাগাও, দেখার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।


অভিনন্দন আবারও। (সংক্ষেপিত)


ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ


সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

Sunday, April 1, 2018

ইলন মাস্কের সাফল্যের ১০ সূত্র


ইলন মাস্ক

রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। টেসলা, পেপ্যালসহ আরও বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। গত ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্সের তৈরি রকেট ফ্যালকন হেভির সফল উৎক্ষেপণের পর তুমুল আলোচিত হয়েছেন তিনি। পড়ুন তাঁর সাফল্যের সূত্র

১. স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান সমালোচনা


চাকরি বা ব্যবসা—আপনি যা-ই করেন না কেন, নিশ্চয়ই কোনো না কোনো পণ্য তৈরি করছেন। আপনার পণ্যটাকে নিখুঁত করতে হলে মানুষের প্রতিক্রিয়া জানা প্রয়োজন। দুর্বল লোকেরা সমালোচনায় হতাশ হয়ে পড়েন। আর মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা সমালোচনাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে উন্নত করেন। মানুষের প্রতিক্রিয়া তাঁরা মন দিয়ে শোনেন। বোঝার চেষ্টা করেন, এই প্রতিক্রিয়ার কতখানি সত্য। ভাবেন, কোথায় কোথায় নিজেকে আরও উন্নত করা যায়। এই বিশ্বাস থেকেই সমালোচনাকে ভালোবাসেন ইলন মাস্ক। তিনি বলেন, ‘আপনি যা-ই করেন না কেন, একজন সুবিবেচকের সমালোচনা আপনার কাছে স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান।’ বটে, সমালোচকেরাই তো আপনার ভুল ধরিয়ে দেবে!

২. হার মানতে নেই


যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টিভি চ্যানেল সিবিএসের একজন সাংবাদিকের সঙ্গে ইলন মাস্কের কথোপকথনের একটি অংশ শুনুন।

: আপনি যখন পরপর তিনবার ব্যর্থ হলেন, হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা মাথায় আসেনি?

: কখনো না।

: কেন?

: আমি কখনোই হার মানিনি। মৃত্যু এলে কিংবা একেবারে অক্ষম হয়ে গেলে তবেই কেবল আমি হার মানব।

ইলন মাস্কের কথা যে কেবল কথার কথা নয়, তাঁর পেছনের দিনগুলোতে তাকালেই বোঝা যায়। স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন ১ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি।

৩. প্রচারের চেয়ে উন্নয়ন জরুরি


অনেকে প্রতিষ্ঠান প্রচারের জন্য যত টাকা ব্যয় করে, পণ্যের মান উন্নয়নের জন্য ততটা ব্যয় করতে আগ্রহী হয় না। টেসলা সম্পর্কে মাস্কের বক্তব্য, তারা কখনোই বিজ্ঞাপনের জন্য তেমন খরচ করেনি, যতটা পণ্যের উন্নয়নের জন্য করেছে। এই মনোভাব শুধু যে সময়, শক্তি ও অর্থ বাঁচায় তা নয়, দ্রুত সামনে এগোতেও সাহায্য করে। মাস্ক বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান দ্বিধায় পড়ে যায়। তারা এমন সব খাতে টাকা ব্যয় করে, যেগুলো তাদের উৎপাদনকে উন্নত করে না।’ এমন ব্যয় মোটেও কোনো কাজের নয় বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।

৪. জীবন হোক রোমাঞ্চকর


ইলন মনে করেন, জীবনটা খুব ছোট। আপনি যে কাজটা পছন্দ করেন না, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই একই কাজ করার কোনো মানে হয় না। বেরিয়ে পড়ুন, পাহাড়ে চড়ুন, বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান...রোমাঞ্চ উপভোগ করুন। আপনি তো রোবট নন। ইলন বলেন, ‘মঙ্গলে বসতি গড়ার কল্পনা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে। প্রতিদিন কিছু সমস্যা সমাধানের চাইতে জীবনটা অনেক বড়। অতএব, জেগে উঠুন আর ভবিষ্যতের কল্পনায় রোমাঞ্চিত হোন।’

৫. যতটা সম্ভব পরিশ্রম করুন


পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। হোক সেটা মানসিক কিংবা শারীরিক—একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই আপনি সফলতা অর্জন করতে পারেন। পরিশ্রম প্রসঙ্গে ইলন মাস্ক বলেন, ‘কেউ সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছে আর আপনি হয়তো ১০০ ঘণ্টা কাজ করছেন। আপনারা দুজন হয়তো একই কাজ করছেন। নিশ্চিত থাকুন, অন্য মানুষটি যেটা এক বছরে অর্জন করবে, সেটা আপনি মাত্র চার মাসেই অর্জন করতে পারবেন।’ তবে কাজের সঙ্গে শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা থাকাটাও প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন তিনি।

৬. ভালোবাসার ক্ষেত্রটিতেই কাজ করুন


ইলন মাস্ক বলেন, যে কাজটি আপনি করছেন সেটাকে ভালোবাসা খুব জরুরি। যদি তা না হয়, তাহলে মনে হবে, আপনি নিজের ওপর জোর খাটাচ্ছেন। এভাবে হয়তো কিছুদিন চলতে পারবেন। কিন্তু যখন কঠিন সময় আসবে, তখন আর সামলাতে পারবেন না। অতএব, সেই কাজই বেছে নিন, যেটা আপনি সহজাতভাবেই পছন্দ করেন। হোক সেটা গান, গণিত কিংবা মহাকাশবিদ্যা। অনেকেই নিজের ভালো লাগার জায়গাটা ধরতে পারেন না। দ্বিধায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন, লক্ষ করুন, কোন কাজটিতে আপনি সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছেন। নিজেকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন। শিগগিরই পছন্দের জায়গাটা ধরতে পারবেন। ইলন বলেন, ‘যদি আপনি কাজটাকে ভালোবাসেন, তাহলে নিশ্চয়ই কাজের সময় ছাড়াও আপনি এটা নিয়ে ভাববেন। আপনার মস্তিষ্ক এই ভাবনার সঙ্গে অভ্যস্ত। আর যদি পছন্দ না করেন, জোর করে এটা সম্ভব নয়।’

৭. ঝুঁকি নিন


ঝুঁকি নেওয়ার কথা সম্ভবত তাঁর মুখেই সবচেয়ে ভালো মানায়! বারবার ঘুরেছে তাঁর জীবনের মোড়। জিপ টু বিক্রি করে তিনি এক্স ডটকম শুরু করেছেন, পেপ্যালের মতো একটা সফল প্রতিষ্ঠানে নিজের শেয়ারের অংশটা বিক্রি করে দিয়ে তিনি স্পেসএক্সের পেছনে লগ্নি করেছেন। ইলন বলেন, ‘কোনো কিছু করা দরকার মনে হলে প্রতিকূল পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হলেও আপনি সেটা করবেন।’ হ্যাঁ, পুরো ব্যাপারটিই ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। তবে জীবনে কিছু পেতে হলে ঝুঁকি তো নিতেই হবে!

৮. ‘হোমওয়ার্ক’ জরুরি


বিচিত্র সব খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন ইলন মাস্ক। বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের রহস্যটা কী? রহস্য হলো, প্রস্তুতি না নিয়ে তিনি মাঠে নামেন না। তিনি যখন মহাকাশ ও অ্যারোনটিকসের দুনিয়ায় পা রাখলেন, অনেক শিল্পপতি ধরে নিয়েছিলেন, শখের বশেই হয়তো এই খাতে টাকাগুলো খরচ করছেন তিনি। কদিন পর নিশ্চয়ই ব্যর্থ হবেন। ভুল। নিজের লক্ষ্য ঠিক না করে ইলন পা বাড়াননি।

৯. মরিয়া হয়ে লড়াই করুন


আপনার কাছে ১০০ টাকা আছে, আপনি আজকের দিনের খাবার কিনতে পারবেন। কিন্তু তাই বলে আপনার কি বসে থাকাটা উচিত? ইলন মাস্ক সেটা একেবারেই মনে করেন না। অনেক কিছু থাকতেই পারে হাতে, হতে পারে কাজ করার খুব বেশি তাড়া নেই। তবে তাই বলে ধীরে-সুস্থে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন আর মরিয়া হয়ে কাজ করুন। লড়াই করুন নিজের সঙ্গে! নিজের সেরাটা বের করে আনুন।

১০. পড়তে হবে


বিখ্যাত মানুষেরা সব সময়ই পড়ার ওপর জোর দেন। ইলন মাস্কও ব্যতিক্রম নন। ইলনের বয়স যখন নয় বছর, তখন তিনি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পুরোটা পড়ে ফেলেছিলেন! সে সময় বিজ্ঞান কল্পকাহিনি পড়ে গড়ে ১০ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতেন। আজ সেই মানুষটির হাত ধরেই মঙ্গলে বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখছে মানুষ। ভার্জ ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমার ছোট্ট লাইব্রেরিতে মহাকাশ-সম্পর্কিত যত বই আছে, সব আমি পড়েছি।’

গ্রন্থনা: প্রথম আলো - ১৪ এপ্রিল ২০১৮,, সূত্র: এন্ট্রাপ্রেনার ডটকম

Monday, March 5, 2018

ওয়ারেন বাফেটের সাফল্যের ১০ সূত্র

ওয়ারেন বাফেট একজন মার্কিন ব্যবসায়ী। বিনিয়োগের কলাকৌশল তিনি খুব ভালো জানেন। সাত বছর বয়স থেকেই ব্যবসার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। ছোটবেলায় চুইংগাম, কোকাকোলার বোতল, এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ম্যাগাজিনও বিক্রি করেছেন। আর আজ? মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস ২০১৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষদের যে তালিকা তৈরি করে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, ওয়ারেন বাফেটের অবস্থান দ্বিতীয়। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিজনেস স্কুলের এই সাবেক ছাত্র সব সময় শিক্ষার্থী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের নানা পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর দেওয়া পরামর্শগুলো থেকে বাছাই করা ১০টি আজ তুলে ধরা হলো
১. খারাপ সময়ে ধৈর্য ধরুন
ওয়ারেন বাফেট সব সময় খারাপ সময়ে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। নিজের জীবন থেকেই নিশ্চয় এই শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তিনি। জীবনে বহুবার অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। ১৯৯৩ সালে প্রায় ৪৩ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে তিনি ডেক্সটার শ্যুজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কিনে নিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে সেই কোম্পানি থেকে ৩৫০ কোটি ডলারের লোকসান হলেও ওয়ারেন বাফেট ধৈর্য হারাননি। ওয়ারেন বলেন, ‘সফলতার দুটি সূত্র। প্রথম সূত্র: কখনো হার মানা যাবে না। দ্বিতীয় সূত্র: প্রথম সূত্রটা কখনো ভোলা যাবে না।’
২. লক্ষ্য ঠিক রাখুন
ওয়ারেন বাফেট মনে করেন, যা করবেন তা পুরো মনোযোগ দিয়ে করা উচিত। ব্যবসার রোমাঞ্চে বুঁদ হয়ে আপনার ব্যবসায়িক বুদ্ধি হারালে চলবে না। সজাগ থাকতে হবে সব সময়। তিনি বলেন, ‘এমন ব্যবসায় বিনিয়োগ করবেন না, যা আপনি বোঝেন না।’ আপনার লক্ষ্য, আপনার মনোযোগ যেখানে একীভূত হবে, আপনি সেই দিকটিকেই ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিন।
৩. নিজের ওপর বিনিয়োগ করুন
ব্যক্তিগত দক্ষতার ওপর নির্ভর করছে আপনার সাফল্য। তাই ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘প্রথমত নিজের দক্ষতার ওপর বিনিয়োগ করুন। আপনার দক্ষতা যত বাড়বে, আপনার ব্যবসাও তত সৃজনশীল হবে।’ নিজেকে সময় দেওয়া যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, এ কথা তিনি সব সময় বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘মাঝেমধ্যেই আমি চুপচাপ বসে ভাবি। অনেকে বলতে পারেন এটা নিরর্থক। কিন্তু ব্যবসা ও বিনিয়োগের সমস্যা নিয়ে ভাবতে আমার ভালো লাগে।’
৪. সঠিক সঙ্গ বেছে নিন
‘এমন মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান, যাঁরা আপনার চেয়ে দক্ষ। আপনার সহযোগীদের ব্যবহার যেন আপনার চেয়ে ভালো হয় এবং তা যেন আপনাকে প্রভাবিত করে।’ ব্যবসার ক্ষেত্রে এই হলো ওয়ারেন বাফেটের মূলমন্ত্র। তিনি মনে করেন, মানুষের সততা খুব বড় গুণ। সবার মধ্যে এই গুণ প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। অতএব, সেই মানুষগুলোকেই আপনার আশপাশে রাখুন, যাঁরা ব্যবসার ক্ষেত্রে সৎ। যাঁদের আপনি বিশ্বাস করতে পারেন। ওয়ারেন বাফেট দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের সঙ্গেই ব্যবসা করেছেন, যাঁদের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ভালো।
৫. অনেক পড়তে হবে
পড়ুয়া হিসেবে এই ধনকুবের ব্যবসায়ীর বেশ সুনাম আছে। অবসর সময়ের ৮০ ভাগ তিনি বই পড়ার পেছনে ব্যয় করেন। বিজনেস অ্যাডভেঞ্চার্স, দ্য এসেস অব ওয়ারেন বাফেট এবং দ্য ইন্টেলিজেন্ট ইনভেস্টর—তরুণ উদ্যোক্তাদের তিনি এই বইগুলো পড়ার পরামর্শ দেন। এইচবিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এখনো দিনের পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা তিনি বই পড়ার পেছনে ব্যয় করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন অন্তত ৫০০ পৃষ্ঠা পড়ো। জ্ঞান হলো “চক্রবৃদ্ধি সুদ”-এর মতো। যত পড়বে, তত বাড়বে।’
৬. সমাজের জন্য কাজ করুন
সমাজ থেকে আপনি যেমন পাচ্ছেন, তেমনি সমাজের জন্য কাজ করাও আপনার দায়িত্ব। ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘বহু বছর আগে একজন একটা গাছ লাগিয়েছিল বলেই আজ একজন সেই গাছের ছায়া পাচ্ছে।’ অতএব আপনার পূর্বসূরির অবদান ভুলে গেলে চলবে না। আপনি যদি ১ শতাংশ সৌভাগ্যবান মানুষের মধ্যে পড়েন, বাকি ৯৯ ভাগ মানুষের জন্য কিছু করা আপনার দায়িত্ব।
৭. অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন
ব্যবসার ক্ষেত্রে অতীত ও ভবিষ্যৎ—দুটোকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মানেন ওয়ারেন বাফেট। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যৎটা পরিষ্কার দেখতে না পারলেও ব্যবসার ক্ষেত্রে আমরা তো আমাদের অতীতটা স্পষ্ট দেখতে পাই। সেটাই আমাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। আবার তিনি এ-ও বলেন, ‘টাকা উপার্জনের এই খেলায় যদি অতীত ইতিহাসই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতো, তবে লাইব্রেরিয়ানরাই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষ হতেন।’
৮. আপনার ‘নায়ক’ কে?
আপনি কাকে অনুসরণ করছেন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কার মতো হতে চান? খুব ভেবে এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক করুন। ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘আমাকে বলো, তোমার চোখে “নায়ক” কে। আমি বলে দেব, তোমার ভবিষ্যৎ কী।’ অর্থাৎ আপনি কাকে আদর্শ বলে মানেন, সেটাই নির্ধারণ করবে আপনার ভবিষ্যৎ।
৯. বিশ্বাস থাকতে হবে
‘আমার বাবা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন। আমিও বিশ্বাস করি নিজেকে।’ দ্য গ্রেট মাইন্ডস অব ইনভেস্টিং বইয়ের ভূমিকায় এভাবেই লিখেছেন ওয়ারেন বাফেট। তাঁর দাবি, সব সময় তাঁর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। বিফল হওয়ার কথা তিনি কখনো ভাবেননি। সফল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে যা ভালোবাসেন, তা-ই করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘কত টাকা আয় হচ্ছে বা কত লাভ হচ্ছে, এই হিসাবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের ওপর বিশ্বাসটা অটুট আছে কি না।’
১০. ভুল থেকে শিখুন
ওয়ারেন বাফেট যে জীবনে শতভাগ সাফল্য পেয়েছেন, তা নয়। তিনি ভুল করেছেন। এমনকি ব্যবসায়িক জীবনে তিনি বড় বড় ভুলও করেছেন। তবে ভুল থেকে তিনি শিখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনের ভুলগুলো মনে রেখে তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেন ওয়ারেন বাফেট। তিনি মনে করেন, ভুলগুলোর কথা নিজের সন্তানদেরও জানানো উচিত। যেন তারা একই ভুল না করে।